Category: লেখালেখির সূত্র

বাংলা ব্লগ ব্লগার ব্লগসাইট এবং সঞ্চালনা

ব্লগিং নিয়ে আমার কিছু প্যাচাল

 

নানাবিধ কারণে ব্লগে নিয়মিত লেখা হচ্ছে না। কিন্তু সময় পেলেই ব্লগ পড়ি এবং পড়লে মন্তব্য দিই। এটি করতে এখনও ভালো লাগে। এদিকে অনেক নতুন ব্লগারের আগমন হয়েছে। তার চেয়েও বেশি সংখ্যক পুরাতন ব্লগার আজ এখানে নেই। তবে কেউ কেউ পাসওয়ার্ড সমস্যার কারণে নতুন আইডি নিয়ে নতুনভাবে ফিরে এসেছেন। কেউবা ইমেইলে যোগাযোগ করে পাসওয়ার্ড পুনরুদ্ধার করে আগের নামেই ফিরে এসেছেন। ফেবুতে নিজেদের ফিরে আসার সংবাদ জানাচ্ছেন, বেশ ঘটা করে। ব্লগে ফিরে আসার চলমান প্রবণতাটি বেশ ভালো লাগছে।

কিন্তু তাতে কি ব্লগের স্থায়ি কোন সমাধান হবে? একসময় অসংখ্য বাংলা ব্লগসাইট ছিল, এখন তো নেই! তবু কেন এখানে আগের মতো পাঠক/ব্লগার নেই? এভাবেই কি শেষ হবে বাংলা ব্লগের ইতিহাস?

সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বজ্ঞান এবং জবাবদিহিতা না থাকলে বাংলা ব্লগের গৌরব ও অহংকার একসময় ইতিহাস হয়ে যাবে।

ব্লগের লেখা প্রসঙ্গে:

আমার অনেক প্রতিভাবান বন্ধুবান্ধব আছেন যারা ভালো লেখেন, ভালো চিন্তা করেন এবং ভালো বিশ্লেষণ করতে পারেন। তাদের লেখা পড়ে এবং বুদ্ধিদীপ্ত পোস্টগুলো দেখে অনেক সময় মজা পাই, উচ্ছ্বসিত হই।

সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে তাদের চিন্তাচেতনার বিস্তৃতি দরকার। কিন্তু আমরা যখন ব্যক্তি বা দল বা একটি নির্দিষ্ট মতবাদকে কেন্দ্র করে কথা বলি, তখন ‘বিষয়’ গুরুত্ব পায় না – ব্যক্তি বা মতবাদই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন নির্দিষ্ট মতবাদে সংশ্লিষ্ট মানুষ ছাড়া অন্যরা তাতে মনোযোগ দেয় না। অতিমাত্রায় সাবজেক্টিভ না হয়ে তারা যদি আরেকটু অবজেক্টিভ হতেন, ব্যক্তি বা দলকেন্দ্রিক না হয়ে তারা যদি আরেকটু বিষয়কেন্দ্রিক হতেন, তবে আরও বেশি মানুষকে তারা নিজের কথা শুনাতে পারতেন।

আমাদের সমাজে এত বিচ্ছিন্নতা এত মেরুকরণ আগে কখনও দেখি নি। সবাই তাদের মতো করে ঘটনাকে ব্যাখ্যা করে। কেউ বক্তার অবস্থান থেকে বিষয়কে উপলব্ধি করতে চায় না। এমন মানুষ খুব কমই আছেন, যাদেরকে বিনাবাক্যে বিনাশর্তে সবাই সম্মান জানায়। অবিসংবাদিত কিংবদন্তির অস্তিত্ব এসমাজে বিরল হয়ে গেছে।

ব্লগের সঞ্চালনা প্রসঙ্গে

সরকার আজকাল সঞ্চয়কে চরমভাবে নিরুৎসাহিত করছে। সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক সেভিংস বা এফডিআর ইত্যাদিতে সুদ কমিয়ে দিচ্ছে। ফিক্সট ডিপোজিটে সুদের হার মাত্র ৩ শতাংশ – ভাবা যায়? সঞ্চয়কে নিয়ন্ত্রণ করার কারণটি খুব সহজে অনুমান করা যায়। সরকার অর্থের সঞ্চালন চায়। উন্নত অর্থনীতির ভিত্তি ‘অর্থের সঞ্চয়’ নয় – অর্থের সঞ্চালন। তরল অর্থের নিয়মিত চলাচল।

মানুষের স্বাভাবিক সুস্থতার রাসায়নিক পরিমাপক হলো, তার রক্ত সঞ্চালনা বা ব্লাড সার্কুলেশন। এটি চিকিৎসা বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেকোন কারণে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে। নিস্তেজ হয়ে মৃত্যুর দিকে নুইয়ে পড়ে। রক্ত সঞ্চালনা স্বাভাবিক রাখার জন্য মানুষ কতকিছু করে, কতকিছুই খায়! একই স্থানে একই পোস্চারে বসে থাকলে শরীরের নির্দিষ্ট অংশটি অবশ হয়ে আসে। এর কারণ হলো, রক্ত সঞ্চালনা বন্ধ হয়ে আসা।

একই কথা বলা যায় ব্লগের সঞ্চালনা নিয়ে। নিয়মিত সঞ্চালনা না থাকলে, শুধু পোস্টদাতাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, ক্ষতিগ্রস্ত হয় এর পাঠক – যারা সবাই ব্লগার না। দৈনিক এবং মাসিক হিট কমে যাবার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্লগ। মানসম্মত লেখাকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে পাঠকের সামনে নিয়ে আসা এবং অনাকাঙিক্ষত ঘটনা থেকে ব্লগকে নিরাপদে রাখাই ব্লগের সঞ্চালকের প্রধান কাজ। ব্লগ কার সহায়তায় চলে, ব্লগাররা টাকা পায় কিনা – ওসব শর্তে বাংলা ব্লগ শুরু হয় নি। ব্লগাররা টাকা পাবে এআশায় কেউ এখানে আসে নি।

সঞ্চালনা সম্পর্কে কিছু প্রস্তাব

সঞ্চালক নামটির সাথেই ‘গতিশীলতার বিষয়টি’ জড়িয়ে আছে। একটি পাবলিক ব্লগসাইটের স্বাভাবিক তৎপরতা ধরে রাখে এর নিয়মিত পরিবর্তন অর্থাৎ নিয়মিত সঞ্চালনা।

•সঞ্চালনা হতে পারে যান্ত্রিক
•সঞ্চালনা হতে পারে মানুষ পরিচালিত

অটোমেটেড মডারেশন দ্বারা ব্লগারদের পোস্টগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে চাইলে, অনেক সময় আপত্তিকর লেখা প্রকাশ হয়ে যেতে পারে। বেশি বিপদজনক কিছু হয়ে গেলে, দিনের/সপ্তাহের একটি সময় হিউম্যান মডারেটর এসে শুধু চেক করে যেতে পারেন। সাধারণত, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয়ভাবে আপত্তিকর পোস্ট বন্ধ রাখার জন্য কিছু ‘প্রতীকী শব্দ’ বা বাক্যাংশ তালিকাভুক্ত করে রাখা যায়। একইভাবে তালিকাভুক্ত করে রাখা যায় ইতিবাচক ও গ্রহণযোগ্য শব্দ বা বাক্যাংশকে। যেসব পোস্টে শব্দগুলো থাকবে, সেগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে আটকে থাকবে অথবা শর্তানুযায়ী নির্বাচিত কলামে যাবে। এক্ষেত্রেও যদি কোন ভালো পোস্ট আটকে থাকে অথবা খারাপ পোস্ট প্রকাশিত হয়ে যায়, নির্দিষ্ট সময়ের হিউম্যান মডারেটর এসে সেগুলোকে সুধরে দিতে পারেন। নিয়মিত আপগ্রেড করতে থাকলে সিস্টেম বুদ্ধিমান হয়ে ওঠে: ভুলগুলো এক সময় কমে আসে। এই দৃষ্টিকোণ থেকে স্বয়ংক্রিয় সঞ্চালনাকে গ্রহণ করা যায়, যদিও এতে এককালীণ কিছু খরচ জড়িত আছে।

হিউম্যান মডারেশন কঠিন, অনিয়মিত, ধারাবাহিকতাহীন এবং ত্রুটিযুক্ত। মানুষ দ্বারা পরিচালিত কোন কিছুই ত্রুটিমুক্ত এবং নিয়মিত হতে পারে না। ‘মানুষ মাত্রই ভুল’ কথাটি দিয়েই বুঝা যায় মানুষের ক্ষমতা কত সীমিত। তার পক্ষে একটি নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর পোস্ট প্রকাশ/নির্বাচন করা অসম্ভব না হলেও কঠিন (এখানে সঞ্চালক বেতনভুক্ত বা অবৈতনিক সেটি বিবেচ্য নয়)। লেখার মান অনুযায়ি নির্বাচিত কলামে দেওয়া অথবা স্টিকি করার কাজটি হিউম্যান মডারেটরের মাধ্যমে হতে পারে। শুধুমাত্র বিশেষ লেখাকে নির্বাচন/স্টিকি করার জন্য একজন মানুষ এসে সঞ্চালনার কাজটি করে যেতে পারেন। তবে একাজটিও অটোমেটেড মডারেশন দ্বারা করা যায় এবং করতে দেখা যায়।

তারপরও হিউম্যান মডারেটর দ্বারা নিয়মিত সঞ্চালনার কাজটি করতে হলে সুনির্দিষ্ট কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হয়। আমার দৃষ্টিতে মাত্র ৪টি বিষয় নিয়মিত তদারকি করলে যে কোন পরিস্থিতিতে একটি ব্লগসাইট অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারে। তা হলো…..

১. নিয়মিতভাবে ব্লগ পোস্টগুলো প্রকাশিত হবে
২. গুরুত্বপূর্ণ পোস্টগুলো নির্বাচিত কলামে যাবে
২. দিনের/সপ্তাহের বিশেষ কোন পোস্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষণে যাবে/স্টিকি হবে
৪. অবাঞ্চিত/ অনাকাঙ্ক্ষিত/ নিয়মবহির্ভূত পোস্ট বাতিল হবে

একাজগুলো নিয়মিত না হলেই ব্লগের গতি কমে আসে। ঝিমিয়ে পড়ে। গতিহীন হয়ে পড়ে। ব্লগার/প্রদায়করা নিরুৎসাহিত হয়ে পড়েন। অভিজ্ঞ ব্লগাররা লেখা অন্যত্র প্রকাশ করেন। নবীন লেখকরা প্রেষণা হারিয়ে ফেলেন: অন্য কিছুতে মনযোগ দেন। অথবা আর মন্তব্যও করতে চান না। ব্লগে সচল ব্লগারের সংখ্যা দিন দিন কমতে থাকে। ব্লগার দ্বারাই ব্লগ সাইটের উন্নয়ন। ব্লগারই পাঠক, ব্লগারই হিটদাতা। ব্লগারই ব্লগসাইটের অত্যাবশ্যক অংশ।

সঞ্চালনা নিয়মিত থাকলে ব্লগার বা প্রদায়করা স্বাভাবিক মাত্রায় লেখতে থাকেন এবং পোস্ট প্রকাশ করতে থাকেন। অন্যের লেখায় মন্তব্য দেবার বিষয়টিও এর ওপরেই নির্ভরশীল। সেরা মন্তব্যকারীকে স্বীকৃতি দেবারও প্রয়োজন নেই, অথবা সৃজনশীল লেখা প্রতিযোগিতারও প্রয়োজন নেই।

সঞ্চালক মাত্র চারটি দায়িত্ব নিয়মিতভাবে করে যেতে পারলে, ব্লগে তৎপরতা বাড়বে এবং ব্লগে হিট বাড়বে। এমন ব্লগসাইটকে বিজ্ঞাপনদাতার জন্য অপেক্ষায় থাকতে হয় না। সময় উপযোগী নেতৃত্ব এবং নিয়মিত সঞ্চালনা থাকলে ব্লগ কারও বোঝা হবার কথা নয়, ব্লগ নিজেই নিজের খরচ যোগাড় করতে পারার কথা।

শেষ কথা

ব্লগ শুরু হয়েছিল বাংলা ভাষায় বাধহীন আত্মপ্রকাশকে প্রমোট করার জন্য। নিঃস্বার্থে। ব্লগাররাও এসেছেন নিঃস্বার্থে। লেখেছেন হৃদয় উজাড় করে। ব্লগে একটি লেখা দেবার জন্য অনেকে বিদ্যাসাগর বনেছেন। ঘটিয়েছেন একটির পর একটি বিপ্লব। ব্লগের লেখাকে কপি করে প্রকাশ করছে বিখ্যাত প্রিন্টমিডিয়াগুলো। কারণ, সামু আজ বাংলা ভাষায় সবচেয়ে বড় তথ্যভাণ্ডার – এটি কোন উইকিপিডিয়ার কাজ নয়।

সামুর জন্য কেউ কীভাবে SEO করেছিল জানা নেই, কিন্তু পেইজ ভিউ বলুন, ওয়েভ ট্রাফিক বলুন, এক সময় বাংলাদেশে সামুকে প্রথম কয়েকটির মধ্যে দেখা যেতো। কিন্তু সামু কি পাঠক/ব্লগারদের পরিবর্তিত প্রয়োজন এবং চলমান ট্রেন্ডকে ধারণ করতে পেরেছে? ভোক্তার চলমান প্রয়োজনকে বুঝতে না পারার জন্য মোবাইল ফোন জায়ান্ট নোকিয়ার পতন হয়েছিল – এখন পুনর্জনম নিয়েও টিকতে পারছে না।

আজ সামু কোথায়? অথচ আজও বাংলায় কোন বিষয়ে ‘গুগল সার্চ’ দিলে সামহোয়্যারইন ভেসে ওঠে। প্রশ্ন হলো, এটি কি ‘অকাল কিংবদন্তী’ অর্জন করবে? নাকি সময়ের সাথে নিজেকে সুধরে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবে? প্রশ্ন থাকলো ব্লগারসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি।

পাবলিক ব্লগে পাঠক প্রতিক্রিয়া: ১৫ অগাস্ট ২০১৭

———————————————
*ব্লগে লেখা ও ব্লগের সঞ্চালনা সম্পর্কে নতুন/পুরাতন চিন্তার সমন্বয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে এই পোস্ট।

সামু’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে ‘আমার’ সাক্ষাৎকার

 

১। আমাকে আমার প্রশ্ন: কী খবর… ব্লগ নিয়ে এত গবেষণা করলেন, অথচ এখন ব্লগে দেখাই যাচ্ছে না কেন?
আমার উত্তর: গবেষণা করি নি – পড়াশোনা করেছিলাম। তারপর যা উপলব্ধি হয়েছে, তা-ই তাৎক্ষণিকভাবে লেখে দিয়েছি।

২। আআপ্র: তার মানে হলো, আপনি আজকাল আর পড়ছেন না! তাই লেখছেন না? কী লজ্জার বিষয়!
আউ: আংশিক সত্য। আজকাল কাজের পড়া ছাড়া ‘পড়ার জন্য পড়া’ তেমন হচ্ছে না। কাজের পড়ায় বেশি আনন্দ পাচ্ছি মনে হচ্ছে। কাজকর্ম বিষয়ক লেখাগুলো ব্যক্তিগত ব্লগে তুলে রাখছি।

৩। আআপ্র: এখানে নয় কেন? যা ব্যক্তিগত ব্লগে দিতে পারেন, সেটি তো এখানেও প্রকাশ করতে পারেন। ব্লগের মায়া কি কমে গেলো?
আউ: এখানে প্রকাশ না করার অনেক কারণের মধ্যে একটি হলো, পাঠকের মন্তব্যের উত্তর দিতে পারবো না বলে। ব্লগের জন্য আগের মতোই মায়া আছে এ কথা বললে মিথ্যা হবে। তবে ব্লগকে মন থেকে মুছে ফেলি নি। এটা অনেক ব্লগারের জন্য সহজ কাজ নয়। তবু মায়া একটু কমে গেছে। মায়া-মহব্বত-ভালোবাসা প্রেমিকার প্রতিও এক থাকে না সবসময়।

৪। আআপ্র: তো বলছেন, মায়া কিছু কমেছে। সবকিছুর পেছনে কারণ থাকে। ব্লগের প্রতি মায়া কমে যাওয়ার কারণটা কি সহব্লগারদের জন্য শেয়ার করা যায়?
আউ: কাজের ব্যস্ততা আছে, এটি আগেও ছিল। তবু একে বাতিল করা যায় না। এটি একটি কারণ। অন্যদিকে, নানাভাবে ব্লগও তার আকর্ষণ হারিয়েছে। কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠাতাদেরও ব্লগের প্রতি মায়া কমেছে। এটিও প্রকৃতির নিয়ম। অথবা বলা যায়, তাদের কর্মপন্থায় পরিবর্তন এসেছে।

৫। আআপ্র: এসব কারণ দেখিয়ে যদি ব্লগে না আসেন, তবে কি বিষয়টি একটু আত্মকেন্দ্রিক হয়ে গেলো না? ব্লগের প্রতি ব্লগারের দায় বলে তো একটা বিষয় আছে। সেটি কি আপনি করছেন?
আউ: অভিযোগ মেনে নিচ্ছি। আত্মকেন্দ্রিক সমাজের প্রভাব আমার ওপরও পড়েছে। কিন্তু আমার অধিকাংশ পোস্টই ব্লগ এবং ব্লগের উন্নয়ন বিষয়ক। ব্লগের প্রতি ব্যক্তিগত দায় থেকে ব্লগার এবং কর্তৃপক্ষ সবারই জন্য লেখেছি। এই ব্লগেই আছে। মুছে ফেলিনি। সময় বদলেছে, ব্লগারদেরও রকম বদলেছে। পড়ার অভ্যাস বদলেছে। মাঝেমাঝে মনে হয়, আমার লেখার প্রাসঙ্গিকতা এসময়ের ব্লগে নেই। এর দায়ও হয়তো আমারই।

৬। আআপ্র: এসব যুক্তি ব্লগে না আসার কারণ হিসেবে যথেষ্ট নয়। যা হোক, এবার একটি ‘সার্বজনীন প্রশ্ন’ করি – ব্লগারের সাক্ষাৎকার নিলে এটি জিজ্ঞেস করতে হয়। ‘ব্লগ আর আগের মতো নেই’ এবিষয়ে আপনার অভিমত কী? 
আউ: সহমত। ব্লগ আর আগের মতো নেই, এটি সার্বজনীন সত্য কথা। ব্লগ হলো সময়ের সাক্ষী। সময় ও নদী এক জায়গায় থাকে না। অতএব ব্লগও আর আগের মতো নেই। তবে আক্ষেপের বিষয় হলো, ব্লগ খারাপ আর শূন্যতার দিকে মোড় নিয়েছে। এটি হতে দেওয়া উচিত ছিল না। কিছু মানুষ বা প্রতিষ্ঠান থাকা উচিত, যারা ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়াবে। তারা আজ তেমনভাবে নেই। মান্না দে’র কফিহাউস (কলকাতার কলেজ স্ট্রিট) যেমন স্নিগ্ধতা হারিয়ে শুধুই প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ব্লগের অবস্থা আজ ঠিক তেমন।

৭। আআপ্র: এর কারণ কী? কী উপায় আছে এ থেকে বের হবার? 
আউ: এ থেকে বের হবার কোন উপায় দেখছি না, কারণ এমন পরিস্থিতি একদিনে একজনের মাধ্যমে হয় নি। এটি অনিবার্য পরিণতির দিকে যাচ্ছে। ভেতরে হয়তো অনেক কারণই আছে, কিন্তু বাইরের (সামাজিক ও রাজনৈতিক) কারণগুলো বড়ই খতরনাক। এখানে প্রতিরোধ সৃষ্টি করা কঠিন। তবু সামু কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ যে, অন্যান্য ব্লগের মতো একে তারা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় নি। যেকোন ভাবে চালিয়ে রেখেছে। দু’একজন অন্তপ্রাণ ব্লগার আছেন, যারা এখনও আগের মতোই লেখে যাচ্ছেন, মন্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। দু’এক বছর যাবত লেখছেন, এমন কিছু দায়িত্বশীল ব্লগার আছেন। আর নতুনেরা তো বরাবরই সুপার একটিভ। হয়তো তাদের জন্যই ব্লগটি টিকে আছে।

৮। আআপ্র: ব্লগের অব্স্থা এর চেয়ে কি ভালো হতে পারতো না? অন্তত সামু তো সব থেকে আলাদা! 
আউ: হয়তো হতে পারতো, কারণ সব বাংলা ব্লগের অবস্থা ম্রিয়মান। বন্ধ অথবা সংকোচিত। এর কিছু সুবিধা এ ব্লগ পেতে পারতো। বাংলা ব্লগের পাইয়োনিয়ার হিসেবে এব্লগের অবস্থা আরও ভালো হতে পারতো। এবং আমি বলছি, ভালোই তো। অন্য যেকোন বাংলা ব্লগের চেয়ে সামু’র অবস্থা নিঃসন্দেহে ভালো। তবে এখানে যারা ৪/৫/৭ বছর আগে ব্লগিং করেছেন/করছেন তাদের স্বপ্ন আর আকাঙ্ক্ষা ছিল হয়তো আরও ওপরে। তারা হয়তো একটু বেশিই প্রত্যাশা করে ফেলেছিল!

৯। আআপ্র: সামু কি কালজয়ী প্লাটফর্ম হতে পারে না? ব্লগার সহযোগে সামু কি সময়ের প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে পারে না?
আউ: অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষকে এভাবে চাপ দেওয়া যায় না। অনেকে শুরু করতে পারে, চালিয়ে যেতে পারে না। শুরু করার জন্য যে ধরণের মেধা প্রতিভা প্রতিশ্রুতিশীলতা দরকার, চালিয়ে যাবার জন্য হয়তো একটু ভিন্ন ধরণের চালিকা শক্তি বা এড্যাপ্টাবিলিটি প্রয়োজন হয়। ব্লগাররা তো অধিকাংশই ঘরকুনো, তা না হলে তারা ব্লগ লেখবে কীভাবে। ব্লগ টিকিয়ে রাখতে মাঝেমাঝে বাইরের শক্তিরও দরকার হয়।

১০। আআপ্র: এত বড় উত্তর দিলে তো পাঠক পড়বে না। যাহোক, সংক্ষেপে সামু’র প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী মূলক একটি বক্তৃতা দিন! 
আউ: সামু আজও যেভাবে দাঁড়িয়ে আছে, সেটি বাংলা ভাষার জন্য এবং বাংলাভাষী লেখক-পাঠকের জন্য সৌভাগ্য ও গৌরবের বিষয়। একাদশ প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে সামহোয়্যারইন ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, কর্মী এবং ব্লগার-পাঠককে আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা! সে সাথে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা!!

*পাবলিক ব্লগে পাঠক প্রতিক্রিয়া: ১৫ ডিসেম্বর ২০১৬

নিজেই নিজের লেখার প্রকাশক: কেন হবেন, কেন হবেন না

নিজের অখাদ্য লেখাগুলো কেউ নিজ খরচে বই বানিয়ে প্রকাশ করে দেবেন এবং সেটি বাজারজাত করবেন, এটি ভাবতেই পুরাতন গল্পটি মনে পড়ে যায়। গল্পটি সবারই জানা। প্রকাশকের দৌরাত্ম্য এবং লেখকের সৃষ্টির প্রতি অবহেলার সেই মর্মন্তুদ কাহিনি। লেখা প্রকাশ তো দূরে থাক, লেখা পড়েই দেখেন না অহংকারী প্রকাশক। লেখক অপেক্ষার প্রহর গুণেন। কাজহীনতায় এক দুঃসহ জীবনে পতিত হন লেখক। অপেক্ষার জীবন কঠিন। প্রেমিকাও অবিশ্বাস করতে শুরু করে। অবশেষে হয়তো আসলো সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। লেখা প্রকাশ পেলো। সেই লেখা পাঠকপ্রিয়তাও পেলো।  শুধু পাঠকপ্রিয়তা নয়, বলা যায়, রাতারাতি প্রসিদ্ধ লেখকে পরিণত হলেন সেই নবীন কবি। কিন্তু হায়, এতদিন নিজের সৃষ্টির প্রতি অপমান আর অপ্রকাশিত থাকার বেদনা সইতে না পেরে হতভাগা লেখক কিছুদিন আগেই পরপারে পাড়ি জমিয়েছেন। আত্মহত্যা নাকি স্বাভাবিক মৃত্যু সেই বিতর্ক থাকুক। কী হলো সেই কবির জীবনে? মরণোত্তর পুরস্কার!

 

বর্তমান বাজারে লেখার ‘শতভাগ’ প্রকাশক পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটি বিষয়। এজন্য অনেকেই প্রকাশক বা সম্পাদকের পথে পা মাড়াতে চান না। নিজেই নিজের লেখার মুগ্ধ পাঠক!  বই বানিয়ে মলাট দেখতে চান, গন্ধ নিতে চান নিজের বইয়ের, পেতে চান অটোগ্রাফ দেবার আনন্দ। লেখক হিসেবে একটি অতি স্বাভাবিক একটি চাওয়া। ভার্চুয়াল জগতের বন্ধুপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে কেউ কেউ হয়তোবা ছাপার খরচ যুগিয়ে নিয়েছেন। কেউ অপেক্ষা করছেন সময়ের। কিন্তু এটি কি সবার ক্ষেত্রে ভালো ফল দিয়েছে? প্রশ্ন থাকলো পাঠকের কাছে।

 

প্রকাশকেরা প্রথমেই যা দেখতে চান, তা হলো বিক্রয়যোগ্যতা বা বইটি বিক্রি হবার সম্ভাবনা। কোন কারণে বইয়ের লেখক আগে থেকেই বিখ্যাত হলে প্রকাশকদের সেই আশঙ্কা অনেকটাই কেটে যায়। এসব ছাড়াও বইয়ের প্রকাশক পাওয়া যায়, যদি লেখার মান থাকে প্রশ্নাতীতভাবে ভালো। ভালো একজন জামিনদার থাকলেও বইয়ের প্রকাশক পাওয়া যায়।  কোন বেস্টসেলার বইয়ের লেখক যদি একটি রিভিউ লেখে দেন অথবা একটি সুপারিশপত্র, সেটিও প্রকাশকের মনকে বিগলিত করে।

 

self_publishing

প্রশ্নটি হলো, নবীন লেখক কোন পথে যাবেন। নিজের লেখা নিজেই প্রকাশ করবেন, নাকি প্রকাশকের দ্বারস্থ হবেন?  দু’টি পথেরই ভালোমন্দ দিক আছে। প্রথার বিপরীতে যেতে হলে প্রথাটি প্রথমত জানতে হয়। অর্থাৎ যারা প্রকাশকের মাধ্যমে বই প্রকাশ করেছেন, তারা কেন করেছেন কীভাবে করেছেন, সেটি মূল্যায়ন করে দেখা উচিত।

 

প্রকাশকের মাধ্যমে বই প্রকাশ

প্রকাশকের মাধ্যমে বই প্রকাশ করা একটি প্রচলিত এবং স্বাভাবিক উপায়, কারণ একই সাথে কন্যা এবং বরের বাবা হওয়া যায় না। বিখ্যাত বইয়ের লেখক হওয়া আর বইয়ের বাজারজাত করা এক নয়। ভালো লেখক আর ভালো বিক্রেতা দু’টি ভিন্ন বিষয়। প্রকাশক পাওয়া মানে লেখার প্রথম স্বীকৃতি পাওয়া। তাই প্রসিদ্ধ প্রকাশকের দায়িত্বে বই প্রকাশ করতে পারা একটি সৌভাগ্যের বিষয়।

কিন্তু সৌভাগ্য তাদেরই, যারা পরিশ্রম করতে এবং ধৈর্য্য ধরতে পারেন। প্রত্যাখ্যাত হবার বেদনাকে মেনে নিতে হয়, হতাশাকে হজম করতে হয়। বিখ্যাত কিশোর সাহিত্যিক এবং হ্যারি পটার সিরিজের লেখক জেকে রলিং কমপক্ষে বারোটি প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। শেষে কোন এক প্রকাশকের কন্যার সাহায্যে তিনি সুদৃষ্টি পেয়েছিলেন। তার পরের সবই ইতিহাস। লর্ড অভ্ ফ্লাইস-এর লেখক উইলিয়াম গোল্ডিংও একুশ বার প্রত্যাখ্যাত হয়েছিলেন। গোল্ডিং-এর দৃষ্টান্ত থেকে বুঝা যায় যে, সাহিত্যে নোবেল পাওয়া লেখকেরাও প্রকাশক কর্তৃক নিগৃহীত হতে পারেন। বাংলা ভাষার অনেক কবি-লেখক আছেন, যাদের প্রতিভা প্রথম দৃষ্টিতে প্রকাশকের আনুকূল্যতা পায় নি। কিন্তু প্রকাশকের অবহেলা প্রকৃত লেখককে থামাতে পারে না, বরং প্রেরণাকে সঠিক পথে পরিচালিত করে।

প্রত্যাখ্যান ‘লেখক চরিত্রকে’ গড়ে তোলে, কারণ এটি লেখককে নিজ লেখায় পুনরায় দৃষ্টি দিতে বাধ্য করে। প্রতিটি অস্বীকৃতি লেখককে সমালোচকের স্তরে নামিয়ে দেয়, যা লেখার উন্নয়নে সহায়তা করে।  কারাজীবন যেমন রাজনৈতিক নেতৃত্বের পরীক্ষা, তেমনই প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে লেখকের ‘লেখক সত্ত্বার’ পরীক্ষা হয়। কিন্তু প্রত্যাখ্যাত বা উপেক্ষিত হবার ভয় লেখকের স্বাভাবিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। লেখককে প্রত্যাখ্যানের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যেতে হয়।

 

প্রকাশক পাবার পরও লেখকের পরীক্ষা শেষ হয় না। সকল পরীক্ষাকে অতিক্রম করার পর শুরু হয় নতুন পরীক্ষা । সেটি হলো, প্রকাশকের মতের সাথে এবং তার শেডিউলের সাথে তাল মেলাতে পারা।  লেখকের কাছে তার লেখা অমূল্য এবং প্রশ্নাতীত, কিন্তু প্রকাশকের দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ পাঠকমুখী। এই দ্বন্দ্বকে মেনে নিয়ে ডেডলাইন মোতাবেক লেখাটি শেষ করতে পারাও লেখকের জন্য বড় পরীক্ষা।

প্রকাশকের দৃষ্টিভঙ্গি অনেকক্ষেত্রেই লেখার পাঠকপ্রিয়তাকে বাড়িয়ে দেয়। তার অভিজ্ঞ সম্পাদনায় একটি কাঁচা লেখা পাঠকের চোখে পরিচ্ছন্ন এবং দৃষ্টিনন্দন হয়ে ওঠে।

ভাষাগত শুদ্ধতার বিষয়টি একজনের পক্ষে নিশ্চিত করা কঠিন। সম্পাদকের পক্ষপাতহীন কাটাছেঁড়ায় একটি লেখা পায় ভাষাগত শুদ্ধতা।  লেখক লেখেন আবেগ আর অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে, কিন্তু সম্পাদক পড়েন সহস্র পাঠকের দৃষ্টিতে।

এখানে বইয়ের দান্দনিক বিষয়টির জন্যও প্রকাশকের দরকার। প্রকাশক জানেন কীভাবে প্রচ্ছদ, ছবি, অক্ষরবিন্যাস এবং পৃষ্ঠাবিন্যাসের সমন্বয়ে একটি বই মানসম্মত ও পাঠকপ্রিয় হয়ে ওঠে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আইনি মারপ্যাঁচ। লেখকের সব লেখাই যে সৃজনশীল, গঠনমূলক এবং সামাজিকভাবে অনুকূল হবে তা নয়। লেখকের চোখে বিষয়গুলো অধরা থেকে যেতে পারে। অভিজ্ঞ প্রকাশক নিশ্চিত করেন যে, লেখকের সৃষ্টি পাঠক-উপযোগী।

প্রকাশক নৈতিকভাবেই লেখকের গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক এবং তার গ্রন্থস্বত্ত্বের রক্ষক।  তারচেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তিনি আর্থিক দায়দায়িত্বের অংশীদার। বই বাজার না পেলে সাধারণত প্রকাশক দায় নেন।

 

বাস্তবতার সাথে যুদ্ধ করে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতা নিয়ে একেক প্রকাশনা সংস্থা একেকটি বিক্রয়যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। তাদের আছে পুস্তক ব্যবসায়ীদের সাথে বিস্তৃত নেটওয়ার্ক, পরীক্ষীত সম্পর্ক। আছে অভিজ্ঞ কর্মীবাহিনি। লেখক-সুলভ আত্মগরিমা তাদের নেই।  বিপরীতে আছে বই বিক্রি করে ব্যবসায় টিকে থাকার তাড়না।

আমরা দেখতে পাই যে, প্রকাশকের পৃষ্ঠপোষকতা লেখককে প্রেরণা দেয় আরও লেখার জন্য। ব্যবসায়িক লাভের কারণেই লেখার মান বৃদ্ধি পায়। অতএব বই লেখে বৃহত্তর পাঠক সমাজে পরিচিতি পেতে চাইলে প্রকাশকের বিকল্প নেই।

 

 

নিজেই নিজের লেখার প্রকাশক

এখানে বিবেচ্য বিষয়টি হলো লেখকের স্বাধীনতা। লেখক স্বভাবতই স্বাধীনচেতা এবং সমাজের পথপ্রদর্শক। পরাধীন আত্মা কখনও ভবিষ্যতের পথপ্রদর্শক হতে পারে না।  তাহলে সক্রেটিস আর গ্যালিলিওরা আজ অচেনাই থেকে যেতেন।  কোন কালজয়ী লেখক তার প্রকাশকের পছন্দমতো গড়ে ওঠেছে এরকম নজির আমরা পাই না।

লেখকই প্রকাশক নির্বাচন করেন, প্রকাশক লেখককে নয়। সুলেখক মানে হলো, নির্ধারকের ভূমিকায় তারাই থাকবেন। পথিকই পথের সৃষ্টি করেছে।

লেখক বৃহত্তর পরিসরে তার গ্রন্থের ভবিষ্যতকে দেখতে পান। প্রকাশকের মুনাফামুখী দৃষ্টি কেবল বর্তমানকেই দেখতে পায়। দূর ভবিষ্যত তাদের কাছে তত গুরুত্বপূর্ণ নয়। দেশের স্বশিক্ষিত দার্শনিক আরজআলী মাতুব্বরের লেখা জনসমক্ষে এসেছে তার মৃত্যুরও পর।  প্রকাশক কোথায় ছিলেন!

লেখকই উত্তম প্রকাশক হতে পারেন, কারণ প্রকাশকেরা একদেশদর্শী।  শুধুই পাঠকের পছন্দের কথা তারা ভাবেন।  পাঠকের মনস্তাত্ত্বিক উন্নয়নের বিষয় তাদের কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। অপমান করে লেখককে তাড়িয়ে দেবার মুহূর্তকাল পরেই তারা একই লেখকের পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়ে পাণ্ডুলিপি সংগ্রহ করেছেন, এরকম দৃষ্টান্ত আছে।

তাই, যদি নিজের পছন্দের লেখা প্রকাশ করতে হয় এবং যদি তাতে প্রকাশকের সমর্থন পাবার সম্ভাবনা না থাকে, তবে নিজের লেখার প্রকাশক নিজে হওয়াই উত্তম।

 

অন্যদিকে, রয়্যালটি বা লেখকের আর্থিক প্রাপ্তিটুকুও আজকাল কমে গেছে। যেমন: শিক্ষকদের মানোন্নয়নের জন্য একটি বইয়ের রয়্যালটি দশ শতাংশের বেশি নয়! লেখক যখন নিজেই পাঠক, বিক্রয়ের টাকাও সবটুকুই তার। অবশ্য লোকসানের দায়ও লেখকেরই!

এক্ষেত্রে লেখকের সিদ্ধান্তে বাধা দেবার কেউ নেই। নিজের বইয়ের প্রচ্ছদ থেকে শুরু করে এর মূল্য নির্ধারণ পর্যন্ত সবটুকু প্রক্রিয়ায় লেখকই সর্বেসর্বা। বইয়ের বিষয় নিয়েও মাতব্বরি করার মতো তার ওপরে কেউ নেই। অবশ্য লেখার বিষয় যদি বিতর্কিত হয়, তবে নিজে এর প্রকাশক হওয়া ছাড়া আর কোন বিকল্পও নেই।

 

কিছু বিষয়ে নিজের প্রকাশক হওয়া ছাড়া তেমন কোন পথ থাকে না। নতুন কোন আবিষ্কার অথবা অনুসন্ধান/গবেষণার প্রেক্ষিতে কোন বই লেখলে, তাতে প্রকাশক ঝুঁকি নিতে চাইবেন না। এক্ষেত্রে লেখকের প্রকাশক হওয়া ছাড়া গত্যান্তর নেই।

যারা ‘টিউন/হাউ টু’ টাইপের লেখক (যথা: ঘরে বসে আয় করুন; নিজেই এসইও শিখুন; ই-মার্কেটিংয়ের ৭টি পদ্ধতি; ধনী হবার ১০টি সহজ উপায় ইত্যাদি) তারা নিশ্চিন্তে বই বের করতে পারেন। নিজেই।

 

 

উভয়দিকেই একটি মিল আছে।  তা হলো লেখার মান এবং পাঠকের গ্রহণযোগ্যতা।  লেখার বিষয় মৌলিক হলে, কনটেন্ট ভালো থাকলে এবং পুস্তক ব্যবসায়ীদের সাথে সামান্যতম যোগাযোগ থাকলে নিজেই প্রকাশক হওয়া যায়। আর্থিক সঙ্গতি থাকলে আর্থিক সাফল্যও লেখক একাই ভোগ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে ‘প্রকাশকের কর্তব্য’ সম্পর্কে লেখককে সজাগ থাকতে হবে।  তখন নিজেকে শুধু লেখক ভেবে ঘরে বসে থাকলে চলবে না। লেখকরা স্বাধারণত অন্তর্মুখী স্বভাবের হয়ে থাকেন; তারা কতটুকু প্রকাশক হয়ে ওঠতে পারবেন, নিজেরাই বুঝতে পারবেন।  অন্তর্মুখী লেখকদের জন্য প্রকাশকই উদ্ধারকর্তা।  লেখার মান ভালো থাকলে এবং পেশাদারী রীতিতে নিজেকে প্রকাশ করতে চাইলে, প্রকাশকের বিকল্প নেই। তবে জুতসই প্রকাশক পেতে হবে।  প্রসিদ্ধ প্রকাশকের আস্থা অর্জনের জন্য প্রয়োজনে এক যুগ অপেক্ষায় থাকা যায়।  আজকাল তো অপেক্ষায় থাকতে হয় না, অনলাইন এবং অগণিত দৈনিক বা সাপ্তাহিক পত্রিকায় অথবা লিটল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশ চলতেই পারে।  পরে সেগুলোকে স্মারক হিসেবে নিয়ে প্রকাশকের আস্থা অর্জনে ব্যবহার করা যায়। (১ মে ২০১৬)

 

 

[সামহোয়্যারইন ব্লগে পাঠক প্রতিক্রিয়া: ৪ মে ২০১৬]


টীকা:
১) লেখক প্রকাশকের পার্থক্যটি আজকাল ঠিক আগের মতো আছে কিনা যাচাই করা যেতে পারে।  কিছু প্রকাশক আছেন, যারা নবীন লেখকদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেবার মহৎ উদ্দেশ্যে লেখকের খরচেই বই প্রকাশ করেন। এসব ঊন-প্রকাশকের নাম যথাস্থানে যথাগুরুত্বেই থাকে। বইয়ের লাভ হলেও সেখানে সিংহভাগ তারাই নেন, কারণ তারা নবীন লেখককে পরিচিত করিয়ে বিশাল মহৎ কার্য সাধন করেছেন।  কিছু লেখকও লেখক থাকেন না, বনে যান প্রকাশক।  এটি ভালো নাকি মন্দ, সেটি অবশ্য অন্য বিতর্ক।

২) শুরুতে দু’একবার প্রত্যাখ্যাত হওয়া যেন বিরহ প্রেমের স্মৃতি। এটি না হলে যেন প্রেম থাকে অপূর্ণ! প্রেমিক হওয়া অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অনেক লেখক একে উপভোগ করেছেন। সেসব দুঃসময় নিয়ে সৃষ্টি করেছেন নতুন লেখা।

৩)  কিছু সাইট আছে, যারা এসব বিরহকে গেঁথে তুলছে নতুন লেখকদের প্রেরণার জন্য। প্রত্যাখ্যাত লেখকদের অভিমতও তারা প্রকাশ করে। এরকম একটি সাইট: প্রত্যাখ্যাত সাহিত্য যা পরবর্তিতে বেস্টসেলার হয়।

 


twl-flow-chart-featured

নিজেই প্রকাশ করবেন, নাকি প্রকাশকের দ্বারস্ত হবেন, এবিষয়ে

সিদ্ধান্ত নেবার জন্য চমৎকার একটি মন-পরীক্ষা আছে।

পাঁচ মিনিটের আত্মপর্যালোচনা: এখনই দেখে নিন!

লেখার ‘মুড’ না থাকলে আপনি কী করেন/করবেন? লেখকের মনস্তাত্ত্বিক দেয়াল ভাঙার উপায়…

writers-block (2)

১.

কেউ বলেন বসন্তকাল এলে আমার লেখার ভাব আসে।  পাখ-পাখালির ডাক আর ফুলের গন্ধ আমার জন্য নিয়ে আসে লেখার বার্তা। শরতের শুভ্র কাশফুলের মেলা কোন লেখকের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে পড়ে। বলুন, শীত না এলে কি কিছু লেখা যায়? কিন্তু কেউ আবার বলেন, বর্ষাকালই আমার লেখার সময়। টিনের চালে বৃষ্টির ঝমঝম শব্দ আমার লেখার মুডকে সচল করে দেয়। কেউ বলেন সবঋতুতেই আমি লেখতে পারি, শুধু রাতটা একটু গভীর হতে হয়।

 

কেউ কেউ একটু অদ্ভুত কিসিমের। বলে কিনা, হাতের কাজ শেষ না করে আমি লেখতে বসে পারি না! বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে, হাড়িপাতিল ধুয়ে, বাচ্চার বাপরে ‘গুডবাই’ জানিয়ে তারপর আমি লেখার মুড হাতে পাই। বাসনকোসন ধোয়ার সময় হলো বই লেখার পরিকল্পনা করার শ্রেষ্ট সময় (আগাথা ক্রিস্টি, ক্রাইম নোভেলিস্ট)। কেউবা বলে, গ্যাসবিদ্যুৎপানির বিল, বাড়িভাড়া, স্কুলের বেতন, গাড়ির তেল, অর্থাৎ মাসের সব বিল পরিশোধ না করা পর্যন্ত আমি লেখায় মন বসাতে পারি না। অতএব লেখালেখি সবকিছু মাসের পনের তারিখের পর।

 

আরেক পক্ষ আছে যারা ব্লগার নামে পরিচিত। তাদের কেউ কেউ বলেন, ব্লগের টেম্পলেট ছাড়া তাদের লেখার মুড আসে না। এমনকি অফলাইনে বা এমএস-ওয়ার্ডে গেলেও হবে না। ব্লগ ছাড়া লেখার ভাব আসে না!

 

পরীক্ষা খারাপ হয়েছে, বা আম্মুর সাথে ঝগড়া হয়েছে, অথবা সোয়ামি/বিবির সাথে কিঞ্চিৎ মনোমালিন্য হয়েছে, অথবা কাছের বন্ধুটির সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। এরকম পরিস্থিতিতে কি কিছু লেখা যায়, বলুন?

 

এরা সকলেই পরিস্থিতির কাছে আবদ্ধ। পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকলে তারা লেখতে পারেন না। ভাবনার স্বাধীনতা হয়তো এদের আছে, তবে সেটি কোন একটি শর্তের অধীন। এটি এক প্রকার মানসিক অবস্থা, যাকে নেতিবাচক-ইতিবাচক কিছুই বলা যায় না।

 

লেখার জন্য ‘ভাবনার স্বাধীনতাকে’ বিবেচনায় এনে, চলুন দুনিয়ার লেখককুলকে দু’ভাগে ভাগ করে নেই।  একদলের নাম দিলাম, গণ্ডিভুক্ত। আরেক দলের নাম গণ্ডিমুক্ত। গণ্ডিভুক্ত যারা, তারা সবসময় লেখার জন্য একটি অজুহাত/কারণ/উসকানির প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। অতএব, লেখার শুরুতে যাদের কথা বললাম, তারা হলেন গণ্ডিভুক্ত।

 

এবার বলছি, গণ্ডিমুক্ত লেখকদের কথা। কবি টাইপের এই লেখকেরা একটু স্বাধীনচেতা। কবি টাইপ বলতে অত্যাবশ্যকভাবে কবি বা কবিতার লেখককে বলছি না। কবিতার লেখক হতে পারেন, অথবা গল্প/প্রবন্ধের লেখকও হতে পারেন। লেখক মানসকে বুঝাচ্ছি। তারা চলন্তগাড়িতেও দিব্বি লেখে যান। হাঁটতে দৌড়াতে সাঁতার কাটতে ওয়ার্কআউটে ঘুমাতে ইয়ে করতে সবকিছুতে তারা লেখে চলেন। কলম নিয়ে অথবা কলম ছাড়া। কমপিউটারে অথবা শূন্য আকাশে। লেখে অথবা না লেখে। সকল অবস্থায় তারা লেখে চলেন। কিছু লেখা কাগজে পায় প্রকাশ, কিছু লেখা থেকে যায় মস্তিষ্কে। লেখা থেমে থাকে না।

 

উচ্ছ্বাস আবেগ চেতনা দ্বারা যারা তাড়িত হন, তাদের না আছে পরিস্থিতির প্রয়োজন, না আছে কোন প্রতিবন্ধকতা। মার্কিন কবি ও সমাজকর্মী মায়া এন্জেলো’র মতে, মানুষের ভেতরে না-বলা-কাহিনির যে বেদনা, এর চেয়ে পীড়াদায়ক আর কিছু নেই।

 

২.

লেখক কখনও পরাধীন নন। তিনি পরিস্থিতির অপেক্ষায় থাকেন না, পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। তিনি খণ্ডকালীন লেখকও নন। তিনি দিনের চব্বিশ ঘণ্টা এবং সপ্তাহের সাতদিনই লেখক। হতে পারে, তার অন্য একটি পেশাগত নাম আছে। হতে পারে, তার অন্য একটি সামাজিক পরিচয় আছে। তিনি লেখক সবসময়ের। কিন্তু মনের ভেতর একটি অদৃশ্য দেয়ালের কারণে গভীর জীবনদর্শন থাকলেও অনেকেই লেখতে পারে না। তার আত্মপ্রকাশের বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে একটি মনস্তাত্ত্বিক দেয়াল। নিজে ছাড়া কেউ তা জানে না।

 

প্রশ্ন হলো, এই মনস্তাত্ত্বিক দেয়াল কীভাবে অতিক্রম করা যায়? লেখক কি সবসময়ই পরিস্থিতি-নির্ভর হয়ে থাকবেন বা থাকেন? আমি মনে করি, না। লেখার চিন্তা মাথায় থাকার পরও লেখতে না পারার এই সমস্যাটি প্রাথমিক পর্যায়ের। কেউ স্বাভাবিক নিয়মেই একে অতিক্রম করেছে, কেউবা সচেতন চেষ্টার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে।

 

মনস্তাত্ত্বিক দেয়ালটি ভাঙার জন্য প্রথমেই নিজের সাথে বোঝাপড়াটুকু শেষ করে নেওয়া প্রয়োজন। বিষয়টি একান্তই নিজের সাথে নিজের। প্রশ্নটি হলো কেন লেখক হতে হবে? কী ‘বিষয়’ আছে যে, তা লেখে যেতে হবে? ডায়েরি লেখে লেখক হয়েছিলেন জার্মানির অ্যান ফ্রান্ক। তিনি বলেছিলেন, লেখার মধ্য দিয়ে আমি সব (নেতিবাচকতা) ঝেড়ে ফেলতে পারি। আমার দুঃখ সব দূর হয়ে যায়, সেখানে জন্ম নেয় সাহস। তার মতে, লেখার মধ্য দিয়ে সমাজে নিজের আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

যারা নিজের সময়-সমাজ-প্রেক্ষিতকে ইতিহাসের ক্যানভাসে এঁকে যেতে চান ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য, তারা লেখা থেকে শক্তি পাবেন। মার্কিন ছোটগল্প লেখক স্কট ফিটজেরাল্ট বলেছেন, আপনি ‘বলতে চান’ বলেই যে লেখছেন বিষয়টি তা নয়, বরং আপনার ‘বলার কিছু আছে’ বলেই আপনি লেখেন

জীবনকে এর নিজস্বতায় না দেখলে এই বলার ভঙ্গি সৃষ্টি হয় না। এটি আসে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই – জীবনকে যাপন করার মধ্য দিয়ে। সচল রাখতে হয় স্বাভাবিক অনুভূতিগুলো: আনন্দ পাওয়া, মজা পাওয়া, বিস্মিত হওয়া, তৃপ্ত হওয়া ইত্যাদি। লেখক নিজে যদি বিস্মিত না হন, তবে তার কথা পাঠককে কখনও বিস্মিত করবে না। লেখক অনুভূতিপ্রবণ। তার অশ্রু ঝরলে পাঠকেরও অশ্রু ঝরবে (রবার্ট ফ্রস্ট)।

 

৩.

মনস্তাত্ত্বিক দেয়াল। প্রতিনিয়ত আমরা ভেতরের অগণিত দেয়াল ভেঙ্গে চলি। এভাবে আমরা সামাজিক প্রাণীতে উন্নীত হই। মনে পড়ে, প্রাইমারি স্কুলের লাজুক সময়ের কথা অথবা ছোটবেলার স্বার্থপর সময়গুলোর কথা, যখন সবকিছুকে ‘নিজের’ মনে হতো? দেয়াল ভাঙ্গার মধ্যেই যেন নিজেকে প্রকাশের সকল রহস্য আটকে আছে। লেখতে গেলে প্রথম যে দেয়ালটি ভাঙতে হয় তা হলো, নিজের সামর্থ্য সম্পর্কে ভয়ঙ্কর অবিশ্বাস। এত লেখকের ভিড়ে আমি আর কী লেখবো, এরকম মনোভাব লেখক সত্ত্বাকে জন্মের আগেই মৃত্যু ঘটায়।

 

লেখক হবার বিষয়টি স্বাভাবিক হোক, কিংবা সচেতন প্রচেষ্টার মাধ্যমে হোক, লেখক কিছু প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে চলেন। স্বাভাবিক ধারাতেই দেয়াল ভেঙ্গে চলেন। এগুলো তাকে লেখক হিসেবে স্বাধীন সত্ত্বা দান করে। অভ্যাসবশতই মানুষ এমন কিছু করে, যা তাকে লেখক হিসেবে গড়ে তোলে। যেমন: বইপড়া, প্রকৃতির প্রতি অনুভূতিশীল হওয়া, রোজনামচা রাখা ইত্যাদি। কেউবা ইচ্ছাকৃতভাবেই কিছু অতিরিক্ত কাজ করেন, যার মধ্য দিয়ে তিনি লেখকের মনোভাব লাভ করেন। এসব নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা করার চেষ্টা করেছি। কিছু বিষয়কে আমি তারকাচিহ্নিত করেছি, যা নবীন লেখকদের জন্য বিশেষ উপকারী।

 

  • প্রিয় লেখকের বই পড়া: প্রিয় এবং নিজের ঘরানার লেখক/বিষয়ে বই পড়া। পড়ার বিকল্প একটি বিষয়ই আছে। সেটি হলো, পড়া। ইন্টারনেটের যুগে পড়া আরও সহজ হয়েছে।
  • প্রচলিত মাধ্যমের সাথে সংযোগ রাখা: অনেক সময় একটি সিনেমা দেখে লেখক অনুপ্রাণিত হয়ে সম্পূর্ণ মৌলিক একটি রচনা সৃষ্টি করেন। ব্লগ/পত্রিকা পড়া, নাটক দেখা এবং বন্ধুর সাথে আড্ডা দেবার অভ্যাসকে ধরে রাখা।
  • চোখ-কান-নাক সচল রাখা: নিজের পর্যবেক্ষণকে সচল রেখে এবং অনুভূতিশীল থেকে সামাজিক জীবনকে বোঝার চেষ্টা থাকা।
  • *লেখার উদ্দেশ্য থাকা: নজরুল চেয়েছিলেন ঔপনিবেশিক শাসনের বিলুপ্তি আর নিজের সমাজে সাম্প্রদায়িক সৌহার্দ্য। স্টিভ জবসের বায়োগ্রাফার (ওয়াল্টার আইজাকসন) চেয়েছিলেন তার লেখায় স্টিভ জবসকে মানুষ চিনুক।
  • লেখার অডিয়েন্স ঠিক থাকা: লেখার জন্য একটি সুনির্দিষ্ট পাঠকশ্রেণী লেখকের মনে থাকা। অনেক নবীন ব্লগার আছেন, যারা ব্লগের পাঠকদের মনোভাবকে লক্ষ্য করে লেখেন। (এটি অবশ্য সকলের ক্ষেত্রে কার্যকর নয়।)
  • প্রতিদিন লেখা: লেখক হতে চাইলে আপনাকে প্রতিদিন লেখতে হবে, কারণ (পানি আনতে) কূয়োর কাছে আপনি মাঝে মাঝে যান না, প্রতিদিনই যান (ওয়াল্টার মোসলি)।
  • সহজ উপস্থাপনা: লেখার বিষয় ও ভাষাকে যথাসম্ভব সহজ ও প্রাঞ্জল রাখার চেষ্টা।
  • *ঘুমানো/ ঠাণ্ডা মেজাজ: সুযোগ পেলে লেখার পূর্বে ঘুমিয়ে নেওয়া। ঘুমের ওপর ওষুধ নেই। সেরা মুড-বুস্টার। মেজাজ স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকলে ভালো। এলক্ষ্যে অনেকে ইয়োগা চর্চা করেন।
  • গুণী মানুষের উদ্ধৃতি: উদ্ধৃতিকে বলা যায় একেকটি দর্শন-কণা যা একটি জীবনমুখী সত্যকে মূর্ত করে তোলে। লেখার ধারণা সৃষ্টি করার জন্য উদ্ধৃতি বিশেষভাবে সাহায্য করে।
  • ধর্ম ও ইতিহাস: ধর্মীয় পুস্তক এবং ইতিহাস উভয়েরই নিজস্ব কিছু তথ্য ও সত্য রয়েছে, যা না পড়লে অন্য কোথাও জানার সুযোগ নেই। অথচ লেখকের প্রেরণার জন্য তা অত্যন্ত প্রয়োজন।
  • নিজস্বতাকে গ্রহণ করা: সবারই স্বকীয়তা আছে। কথা বলার ভঙ্গি যেমন এক নয়, লেখার ভঙ্গিও সকলের এক হয় না। নিজের স্বাভাবিক প্রকাশভঙ্গিকে বুঝা এবং মেনে নেবার মধ্যে লেখক স্বত্ত্বা গড়ে ওঠে।
  • লেখক পরিচয়: লেখক হিসেবে পরিচয় দেওয়া। তাতে লেখক হিসেবে দায়িত্ববোধ সৃষ্টি হয়। বিষয়টি আপাতদৃষ্টিতে ছোট মনে হলেও, পরিশেষে বিশাল সুফল নিয়ে আসে।
  • লেখক মানস: লেখকের মনে থাকতে হয় লেখকের মানসিকতা। বিষয় থেকে ব্যক্তিকেন্দ্রীকতা আলাদা করা। নিজের সমাজ-পরিস্থিতিকে লেখ্যরূপ দেবার সার্বক্ষণিক চিন্তা।
  • মানুষের সাথে সম্পর্ক: মানুষের সাথে সহজাত সম্পর্কের মধ্য দিয়ে আসে লেখার মৌলিক উপাদান। মানুষের আচরণকে বুঝতে না পারলে লেখার বিষয় খুঁজে পাওয়া কঠিন।
  • প্রেরণার নিজস্ব উৎসকে খুঁজে নেওয়া: ভিক্টোর হুগো কফির গন্ধ না পেলে লেখতে পারতেন না।
  • *নোট রাখা: যখন ভাবনা তখনই লেখে রাখার ব্যবস্থা রাখা। নোটবুক/ডায়েরি/ট্যাব/স্মার্টফোনে লেখে রাখলেই পাখির মতো চঞ্চল ভাবনাগুলোকে আটকে রাখা যায়।
  • *মুক্তলেখা: দিনের একটি স্বস্তিদায়ক সময়কে বেছে নিয়ে ১০মিনিট যেকোন বিষয়ে লেখা।
  • *ছোট ছোট কথা: হয়তো সব লেখাই সাহিত্য হবে না। তবু সবকিছু লেখে প্রকাশ করার অভ্যাস রাখুন। ফেইসবুকে হলেও লেখুন। বন্ধুকে মেসেজ পাঠাবেন: যত্ন করে গুছিয়ে লেখুন আপনার বার্তা। ছোট ছোট কথা হতে পারে ভবিষ্যত লেখার পাথেয়।

 

 

লেখার মুড/মনোভাব বিষয়ক এই পোস্টগুলোতে শুধুই কিছু পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হলো। কোন নীতিমালা বা মতবাদকে প্রতিষ্ঠিত করা এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। পাঠক আছেন বিভিন্ন মতের/পথের ও মনোভাবের। সবার জন্য সবকিছু একই সাথে প্রযোজ্য হবে না, হবার নয়। এই লেখার বড় ত্রুটি হলো, সংক্ষিপ্ততা। বিশদ কোন আলোচনা নেই। তাই ওপরের আলোচনাকে শুধুই একটি রেফারেন্স হিসেবে বিবেচনা করলে বাধিত থাকবো। এটি কোন নির্দেশিকা/পরামর্শ নয়।

 

.

.
—————————
*ছবিটি libbycole.files.wordpress.com থেকে নেওয়া।

**প্রথম প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫০। সামহোয়্যারইন ব্লগ ডট নেট

লেখার ‘মুড’ না থাকলে আপনি কী করেন/করবেন?

নতুন লেখকরা সবসময় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের লেখার প্রেরণা সম্পর্কে জানতে চান। লেখার ‘মুড’ কীভাবে আসে? একজন খ্যাতিমান লেখককে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি যা উত্তরে জানালেন, তা সকলের জন্য প্রেরণার হতে পারে। আবার বিতর্কের বিষয়ও হতে পারে। উত্তর দেবার আগে তিনি একটি প্রশ্ন জুড়ে দিলেন:

লেখক: সত্য বলবো নাকি মিথ্যা বলবো?
প্রশ্নকারী: অবশ্যই সত্য বলবেন!
লেখক: সত্য বললে আমাদের লেখক খ্যাতির কিছু ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্নকারী: তবু বলুন। লেখকের কাছ থেকেই তো সত্য আশা করা যায়!
লেখক: প্রায় সবগুলো লেখাই ‘আউট-অভ্-মুড’ থাকা অবস্থায় লেখা। ইন ফ্যাক্ট, মুড খারাপ থাকলেই আমি লেখতে বসি!

লেখক নম্বর দুই বললেন, লেখকের আবার ‘মুড’ কী? আমি যদি কথা বলতে পারি, তবে লেখতেও পারি। লেখা তো আসলে আমাদের মুখের কথারই লেখ্য রূপ।

লেখক নম্বর তিন: প্রথমেই আমি যা করি, তা হলো ইন্টারনেট ব্রাউজারগুলো সব বন্ধ করা। এগুলো আমার একনম্বর মনযোগ নষ্টকারী।

লেখক নম্বর চার: আরে কী কয়? ব্রাউজার বন্ধ করলে, লেহমু কী? হুনেন, লেহার মুড না থাহলে প্রথমেই আমি ব্রাউজার খুলে দেই। ফেইসবুকে বন্ধুর স্ট্যাটাস থেকে আমি পাই মহকাব্যের প্রেরণা!

লেখক নম্বর পাঁচ: মুডের অপেক্ষায় থাকলে হবে? সম্পাদকের প্রশ্নের জবাবে যদি বলি মুড নাই, তবে মাস শেষে বিলটা আসবে কোত্থেকে? আমি লেখা চালিয়ে যাই সকল অবস্থায়। অতএব, মুড না থাকলে প্রথমেই আমি যা করি তা হলো, লেখা শুরু করে দেই।

লেখক নম্বর ছয়: আমি যেখানেই যাই সেখানেই কবিতার/গল্পের বীজ বুনি। ভালো একটি ভাবনা যখন মনে আসে, তখনই আমার নোটবুকে/স্মার্টফোনে সেটি টুকে রাখি। একেকটি ভাবনা, একেকটি কবিতা/গল্প। লেখতে বসলে সেগুলোকেই সম্প্রসারিত করে যাই। কিছু কিছু ভাবনা অবশ্য লিখিত থাকলেও কিছু সময় পর মরে যায়। মানে, লেখার সময় ওগুলোর কোন সূত্র খুঁজে পাই না আর। [ইন্নালিল্লাহ… বলে, পরবর্তি নোটে দৃষ্টি দেই :( ]

লেখক নম্বর সাত: আমি লেখার চাষ করি। সব ফুল যেমন ফল হয় না, তেমনি সব ভাবনায় লেখা হয় না। অর্থাৎ একটি বিষয়ে লেখবো এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি সবসময় বসি না। আমি সাধারণত লেখতে বসি অনেকগুলো বিষয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলোকে কাগজবদ্ধ করতে। লেখতে থাকি… লেখতে থাকি। কমপক্ষে দু/তিন পৃষ্ঠা তো প্রতিদিনই লেখি। তা না হলে মনে হয়, আজকের দিনটিই মাটি!

লেখক নম্বর আট: লেখা নিয়ে কোন চাপাচাপিতে আমি নাই। ভাবনা না আসলে নির্ভাবনায় থাকি। টিভি দেখি, পত্রিকা পড়ি, বারান্দায় দাঁড়িয়ে আরামছে বিড়ি টানি! আকাশ দেখি, পাখি দেখি! পাড়ার চায়ের টঙের তেল চিটচিটে বেন্চিতে বসে লাল চা পান করি। বউ/বাচ্চা/বান্ধবির সাথে আলাপে মেতে ওঠি। জীবনে লেখাটাই সব নয় – জীবনবোধেরও দরকার আছে।

লেখক নম্বর নয়: লেখার মুড, নাকি ‘মুডের লেখা’? আমি সকল মুডকে লেখায় প্রয়োগ করি। মুড থাকলেই যদি লেখতে বসি, তবে তো সব লেখা এক রকম হয়ে যাবে! আমি সকল মুডেই লেখতে জানি এবং লেখিও। পাঠক পড়বেন কি না পড়বেন, সেটি অবশ্য আলাদা কথা। আমি লেখি আমার বিচিত্র মুডকে প্রকাশ করার জন্য।

লেখক নম্বর দশ: আমার দরকার তিনটি বিষয়, বিড়ি/কফি, ডেডলাইন, কম্পিউটার।

লেখক নম্বর এগারো: লেখা নিয়ে আমি কখনও ভাবি না। কারণ আমি যা ভাবি, তা লেখি না; যা লেখি তার সবই ভাবি না। লেখা শেষে নিজেই বিস্মিত হই… কী ভাবলাম, কী লেখলাম!

লেখক নম্বর বারো: মুড ছাড়াও আরেকটি জিনিস লাগে, যা প্রায়ই মুডের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। বাধ্যবাধকতা। এটি আসে যখন লেখক অর্থের জন্য লেখেন অথবা ‘অর্জিত সুনাম’ ধরে রাখার জন্য লেখেন। ‘প্রয়োজন’ সকল সৃষ্টির জন্মদাত্রী। বাধ্যবাধকতাও তেমনই একটি বিষয়।


… … …
লেখক নম্বর চারশ’ উনিশ (পোস্টের লেখক): মুড কাহাকে বলে, উহা কত প্রকার, তাহারা কী কী? আমি তো লেখি না, ব্লগিং করি!
লেখক নম্বর চারশ’ বিশ: লেখার মুড না পেলে সবসময়ই আমি যা করি তা হলো, অন্যের লেখা কপি করতে শুরু করে দেই।

আমি কোন লেখকের সাথে রাজি বা গররাজি কিছুই হতে পারছি না। বিষয়গুলো আপেক্ষিক।

লেখক যখন লেখতে বসেন তখন নিশ্চয়ই তিনি একটি ‘মেজাজে’ থাকেন। হতে পারে সেটি চিন্তাশীল অথবা হেঁয়ালী, গম্ভীর অথবা ব্যাঙ্গাত্মক, মনোযোগী অথবা উদাসীন, ক্ষুব্ধ অথবা হৃষ্ট। এই ‘মেজাজ’ নিয়ে তিনি যা লেখবেন, সেটি হয়তো সৃষ্টি করবে প্রেমবোধ অথবা বিষাদ, আনন্দ অথবা বেদনা, আশা অথবা নিরাশা… ইত্যাদি। পাঠক হয়তো মনে মনে হাসবেন, অথবা ব্যথিত হবেন। নিরবে অশ্রু ফেলবেন অথবা অট্টহাসিতেও ফেটে পড়বেন। এসব কিছু নির্ভর করে লেখক তার লেখার সময় ‘কী মেজাজে ছিলেন’ তার ওপর। গল্প হোক বা কবিতা হোক অথবা প্রবন্ধ হোক, লেখার একটি স্বতন্ত্র মেজাজ থাকবেই। আমি মনে করি, মুডই (মেজার) লেখার প্রেরণা বা লেখার সূত্র এনে দেয়। এবিষয়ে আলোচনা চলতে পারে।

পাঠকের কাছে জিজ্ঞাসা:
লেখার ‘মুড’ না আসলে আপনি কী করেন?
আপনি কি রাইটারস ব্লক বা এরকম কিছু মিথে বিশ্বাস করেন?

চলুন, এনিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠি।

[চলবে…]

—————————
*ছবিটি libbycole.files.wordpress.com থেকে নেওয়া।

আদর্শবাদী ব্লগার বনাম সৃজনশীল ব্লগার বনাম ফেইসবুকিং ব্লগার বনাম…

কেউ কেউ বলেন, ব্লগার সিজনাল, ব্লগ থাকে চিরকাল। পত্রিকার পাতায় প্রকাশিত লেখা দিনান্তে ভাঁজে পড়ে যায়, কিন্তু ব্লগের লেখা সব সময় থাকে পড়া ও উদ্ধৃতির জন্য প্রস্তুত। বই অথবা সংবাদপত্রের পাতা হারিয়ে যেতে পারে দৃষ্টিসীমানা থেকে, কিন্তু বোদ্ধারা বলেন, ইন্টারনেটে নাকি ইরেজার নেই! ওখানে কোন কিছুই মুছে যায় না। পোস্টদাতা মুছে দিলেও সেটি কোথাও-না-কোথাও থেকেই যায়।

ব্লগারদের মধ্যে একটি বড় অংশ আসে যুবসম্প্রদায়ের কর্মহীন ও স্টুডেন্ট অংশ থেকে। তারা ইন্টারনেটে এসে একটি সামাজিক বন্ধন সৃষ্টি করেন। ব্লগে যতদিন থাকেন চুটিয়ে ব্লগিং করেন: লেখায় প্যাশনেট, মন্তব্যে অনেস্ট। পোস্ট দেন, মন্তব্য দেন এবং এমনকি বিভিন্ন ব্লগারদের পোস্ট নিয়ে সংকলনও বের করেন। তারা নতুন পুরাতন সকল ব্লগারকে জাগিয়ে রাখেন, লেখায়-মন্তব্যে-সংকলনে। অল্পকাল স্থায়ি হলেও একটি ব্লগকে প্রাণচঞ্চল রাখতে এই ব্লগারদের রয়েছে বিরাট ভূমিকা। সকলেই সিজনাল ব্লগার নন। অনেকেই কর্মজীবনে গিয়েও ব্লগিং করছেন।

স্ট্যাটাস লেখতে লেখতে লেখক। ভাষার ভুল আর বানানের ভুল করার একচ্ছত্র অধিকার তারা ভোগ করেন! ব্লগে যদি ভুল না করা যায়, তবে আর কোথায়! আই ডোন্ট মাইন্ড দেয়ার ল্যাংগুয়েজ। নতুনেরা আদর্শ নিয়ে আসুন, গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ নিয়ে আসুন অথবা দৈনিক স্ট্যাটাস নিয়ে আসুন, যত বেশি ব্লগে থাকেন ততই হয় সৃষ্টি। আজকের দিনের কোন টিনেজ বালিকার তাৎক্ষণিক একটি প্রতিক্রিয়া, অথবা পাঁচ লাইনের একটি স্ট্যাটাস, আগামি দশ বছর পর হতে পারে একটি ঐতিহাসিক ঘটনার নির্ভরযোগ্য সাক্ষী। অথবা একটি গুরুত্বপূর্ণ সংবাদের বিশ্বাসযোগ্য সূত্র। কে জানে!

আমি খুব চাই, ব্লগের সঞ্চালক যেন তাদেরকে কোনভাবেই নিরুৎসাহিত না করেন, অথবা থামিয়ে না দেন। দিনে একাধিক ততোধিক পোস্ট দিলেও না! সামুতে অবশ্য এই কথা বলে দিতে হয় না। ব্লগ হওয়া উচিত তরুণ প্রজন্মের উচ্ছ্বাসে ভরা হইহুল্লাপূর্ণ এক আড্ডাখানা। এখান থেকে বের হয়ে আসুক ভবিষ্যত সমাজের নেতৃত্ব ও মননশীলতার পথনির্দেশ। কিন্তু জীবন ও জীবিকার অদম্য আকর্ষণে তাদেরকে যেতেই হয়। মজার ব্যাপার হলো, পেশা যা-ই হোক ব্লগার নামটি অন্তর থেকে মুছে ফেলেন না তারা! হয়তো তা সম্ভবও হয় না!

২.
বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণে ‘বাংলাদেশ’ আর অধিকাংশ তরুণের নির্ভরযোগ্য গন্তব্য হতে পারে না
। কাজ অথবা বিদ্যালাভের জন্য তারা স্বদেশ ছাড়েন এবং অধিকাংশই (স্থায়ীভাবে) ফেরেন না। কিন্তু স্বদেশকে ভুলে থাকতে পারেন না – বরং দূরত্বের বেদনায় তীব্র স্বদেশপ্রেমে আপ্লত থাকেন অনেকে। গণমাধ্যমে স্বদেশের সংবাদ নেন, সংবাদ বিশ্লেষণ করেন ও অভিমত দেন। ফেইসবুক, টুইটার, ব্লগ ইত্যাদি সামাজিক মাধ্যমে তারা দেশের রাজনৈতিক-সামাজিক ঘটনাবলীতে জড়িয়ে থাকার চেষ্টা করেন। নিজ দেশের মানুষের সাথে আকাশপথে পরিচিতি গড়ে তোলেন। দূরে থেকেও স্বদেশের আকর্ষণ নতুনভাবে উপলব্ধি করেন।

বলছি প্রবাসী ব্লগারদের কথা। তাদের মধ্যে অনেকের নিকনেইম আজ কিংবদন্তি লাভ করেছে। প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বের সঙ্গে ছাপে তাদের লেখা। (কেউ আবার বিদেশী নাগরিকত্ব বা দূরত্বের সুবিধা নিয়ে একটু একটু বাড়তি কথা বলার সুযোগ নিয়ে থাকেন। অপমানজনক, দেশপ্রেমহীন এবং দায়িত্বহীন মন্তব্য দিয়ে থাকেন বিভিন্ন স্পর্শকাতর বিষয়ে, যা হয়তো স্বদেশে থাকলে সাহস করতেন না।) পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে থাকা বাংলাভাষী ব্লগাররা ব্লগকে চব্বিশ ঘণ্টা মাতিয়ে রাখেন। ফটোপোস্ট, ভ্রমণ পোস্ট এবং প্রবাসী জীবনের লেখা দিয়ে সমৃদ্ধ করে চলেছেন বাংলা ব্লগকে। ফলে ব্লগ হয়েছে মেধাবী তরুণদের স্বদেশে ফেরার প্রেরণা। জয়তু প্রবাসী ব্লগার!

৩.
ব্লগ লেখার প্রেরণা আসে ‘ব্লগারের উদ্দেশ্য’ থেকে।
তার উদ্দেশ্য যদি হয় কোন আদর্শকে প্রতিষ্ঠা করা, তবে লেখায় থাকে যুক্তি ও তথ্যের সম্মিলন। এখানে নতুন/পুরাতন বলে কোন কথা নেই। তিনি প্রবন্ধ লেখছেন, নাকি নিবন্ধ লেখছেন, নাকি কবিতা লেখছেন – কিছুই যায় আসে না। লেখার মূল বক্তব্যে থাকে আদর্শের প্রতিচ্ছবি। আদর্শবাদী ব্লগাররা সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্য হতে আসেন এবং তুলনামূলকভাবে বেশিদিন টেকেন। এঁরা ব্লগের বটবৃক্ষ! অতীত ও ভবিষ্যৎ ব্লগারদের মধ্যে যুগবন্ধনকারী। ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের প্রতিচ্ছবি। ব্লগে তাদের মন্তব্য সাধারণত শ্লেষপূর্ণ ও প্রতিক্রিয়াশীল হয়।

বলাবাহুল্য, প্রতিক্রিয়াশীলতা পুরোপুরি নেতিবাচক কোন বিষয় নয়। বিপ্লব ও সংস্কারের তাড়না আসে প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে। দেশের প্রচলিত আইন ও সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রেখে পরিবর্তনের কথা বলা কোন অপরাধ নয়। বাংলা ব্লগের শুরুর সময়টি ছিল আদর্শবাদী ব্লগারদের সোনালি দিন। বর্তমান সময়টিও ফেলনা নয়, তবে সোনালি রুপালি ইত্যাদি ‘রঙ’ দিয়ে এখন আর ব্যাখ্যা করা যায় না!

যা হোক, আদর্শবাদী ব্লগাররা কিন্তু ব্লগের ‘হিট লক্ষ্ণী’। মন্তব্য ১টি, পঠিত ১১,২৮৮বার! অথবা তিন লাইনের একটি লেখায় দেখবেন মন্তব্য পড়েছে মাত্র ৩০২টি! (অবশ্য, ট্যাগিং, বিভক্তি সৃষ্টি এবং দেশের হারিয়ে যাওয়া ও গ্রামগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ‘অবহেলিত গালিগুলোকে’ একত্রিত করে সেগুলোকে বহুলপ্রচলিত ও জনপ্রিয় করার কাজে কিছু ব্লগারের অবদান অনস্বীকার্য।)

জাতীয় এবং সামাজিকভাবে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুাতে জনমত সৃষ্টি করা এবং কর্তৃপক্ষকে ভালো সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছেন এশ্রেণীর ব্লগাররা। নতুন প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রাম সম্পর্কে ধারণা সৃষ্টি এবং জাতীয়তাবাদের ভিত মজবুত করে চলেছেন তারা। নাগরিক সাংবাদিকতার মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক সমস্যার সমাধানে সৃষ্টি করেছেন ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা।

৪.
ব্লগ যেন সৃজনশীলতার চারণভূমি! এখানে সৃজনশীলতা পয়দা হয়!
তাৎক্ষণিক প্রকাশ, তাৎক্ষণিক মন্তব্য আর অভিমতের সুযোগ নিয়ে অনেক স্ট্যাটাস লেখক জীবনমুখী গল্পকার, ছড়াকার বা কবিতে পরিণত হয়েছেন। কেউবা হয়েছেন বিবর্তিত! নাকি মেটামরফোসিস? ছিলেন কবি, হয়েছেন গল্পকার; অথবা ছিলেন ডাক্তার, হয়েছেন কবি! (কেউ কেউ লেখতে লেখতে আরও ভোঁতা হয়েছেন। কিছুই হতে পারেন নি/হন নি, বরং যা ছিলেন, তা হারাবার দশা হয়েছে! নেভার মাইন্ড, তাদের সংখ্যা এতই কম যে খালি চোখে দেখা যায় না!)

ঠিক ব্যাখ্যা করতে পারবো না, কিন্তু ব্লগ থেকে সৃষ্ট লেখকেরা যেন ‘ভিন্ন একটা জেনার’ সৃষ্টি করছেন বাংলা সাহিত্যে। প্রথাগত গ্রন্থকারদের সাথে তাদেরকে পুরোপুরি মেশানো যায় না। তাতে ব্লগারদেরই লস হবে। (অন্যদিকে কেউবা হয়েছেন বনসাঁই – বয়স বাড়লেও অন্যকিছু বাড়ে নি। বছরের পর বছর লেখেও ‘জাতীয়’ বানান লেখতে পারেন না। প্রচলিত শব্দগুলোকে না জেনেই নতুন শব্দগঠনে নামেন। আর, কবিতার কী ছিরি! যাক, এসব বিষয় তত ব্যাপক নয়।)

সৃজনশীল ব্লগাররা ব্লগের সাহিত্য সম্ভারকে গড়ে তুলেছেন। সৃজনশীলেরা একদিনে তৈরি হয় নি। পরিশ্রম, একনিষ্ঠতা, অধ্যয়ন ও জীবনবোধ হলো সৃজনশীল ব্লগারদের প্রধান বৈশিষ্ট্য। কেউ ব্লগার হয়ে লেখক হয়েছেন, কেউবা আগেই লেখক ছিলেন। তবে ব্লগে প্রথম শ্রেণীর লেখকের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু সকলেরই আদি এবং অন্ত ব্লগ। এঁরা সৃজন করেন। নামের কারনেই সৃজনশীলদের নাম অনেক ওপরে!

ব্লগারদের সংখ্যা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। কেউ বলছেন বেড়েছে, কেউ বলছেন কমেছে। জনসংখ্যা আর ইন্টারনেট ইউজার যদি বাড়ে, তবে ব্লগারের সংখ্যা কমে কীভাবে? আমি বলছি, দু’টোই হয়েছে। বেড়েছে ব্লগার এবং ব্লগসাইট; কমেছে প্রতি ব্লগসাইটের নিজস্ব ব্লগারের সংখ্যা। সব মিলিয়ে একটি বৃহৎ ব্লগার কমিউনিটি গড়ে ওঠেছে বাংলা ভাষায়। সংবাদ মাধ্যমের কোন বিষয়ে সন্দেহ বা বিভ্রান্তি থাকলে মানুষ ব্লগে তাকায়, ব্লগের পৌনপুনিক দাবিগুলো অবশেষে মূলধারার সংবাদ মাধ্যমে গড়ায়। কারও অধিকার ক্ষুণ্ন হলে উভয়ে (অনলাইন ও অফলাইন) সমস্বরে চেঁচিয়ে ওঠে। ব্লগার এবং সামাজিক মাধ্যমের বলিষ্ঠ অংশগ্রহণ নিয়ে বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম একটি বৃহৎ ও শক্তিশালী গণমাধ্যম।

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:০৭ [Somewhereinblog.net]

লেখা নিয়ে সুধী পাঠকের কাছে আমার কৈফিয়ত

মাধ্যম আর ভাষার শুদ্ধতা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে অবশেষে প্রকাশটাই হয় না। ফলে লেখকের মস্তিষ্কে বদহজম! নিজের চিন্তা বা জীবন দর্শনকে শব্দ-বাক্য-কবিতা-বা-গল্পে প্রকাশ না করা পর্যন্ত সেটাকে মূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন কিছুই করা যায় না। ভাষার শুদ্ধতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা লেখকের জন্য শুরুতেই জরুরি নয়। জরুরি হলো নিজেকে প্রকাশ করার আকুতি নিবৃত্ত করা। সাধারণত সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যক্তির আত্মপ্রকাশের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।ভাষা ও মাধ্যম যদি লেখকের মননে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে সমাজ বা রাষ্ট্র যা করার তা লেখক নিজেই করে ফেললেন।আমার পর্যবেক্ষণে, লেখকের মনে ভাষার চিন্তা করার পূর্বেই আসে ‘বিষয়ের চিন্তা’।

.
মাধ্যম বা প্রকার চিন্তা করার পূর্বেই আসে লেখার ধারণা বা অনুভব। ভাষার জটিলতা নিয়ে চিন্তা করার পূর্বে লেখক তার লেখার পটভূমি নিয়ে চিন্তিত হন, এটিই স্বাভাবিক। বিষয়ই যদি না থাকলো, তবে মাধ্যম বা শুদ্ধ ভাষা সেখানে কী করবে? লেখক চিন্তা করবেন তার অনুভব নিয়ে, তারপর মাধ্যম বেচে নেবেন। ভাষার চিন্তা প্রুফরিডাররা করুক! (এহেম! যা বলছিলাম…) ভেতরে যদি চিন্তা থাকে, মৌলিক ভাবনা থাকে, তবে সেটা প্রকাশ হওয়া উচিত, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। দেরি করলেই হারানোর সম্ভাবনা (হাছা কিনা?)।
.
প্রকাশের মাধ্যম তারপরে আসতে পারে।লেখা নিয়ে আমি অনেক কথাই বলছি বিভিন্ন ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে। হয়তো সেখানে সবকিছুই অকাট্য নয়। কেউ কেউ একে বাঁকা চোখে দেখে বলতে পারেন, আমি খুব জ্ঞান প্রকাশ করছি বা শিক্ষা দিচ্ছি। প্রথমত, তাদেরকে সবিনয়ে বলতে চাই, প্রথমত নিজেকে বুঝার জন্যই আমি লিখছি। অস্কার ওয়াইল্ড-এর মতো নিজেকের বুঝার পর হয়তো লেখা থামিয়ে দেবো (কথার কথা!)!
.
দ্বিতীয়ত বলতে চাই, ব্লগের লেখা চূড়ান্ত নয়, এলেখা তো খসড়া হিসেবেই বিবেচিত। তৃতীয়ত, আমার বক্তব্য প্রশ্নাতীত তা কখনও দাবি করি নি, বরং পাঠককে ক্রিটিকেল হবার আহ্বান জানিয়েছি সুযোগ পেলেই। কিন্তু যে কথা অনেকবার বলেছি তা হলো, এখানে পাঠকরা খুবই সহানুভূতিশীল অন্যের অনুভূতির প্রতি চরম শ্রদ্ধাশীল; তারা সমালোচনা প্রায় করতেই চান না। এ মনোভাবকে আমি আংশিকভাবে গ্রহণ করি। তবে নানাবিধ কারণের মধ্যে এর একটি কারণ হতে পারে যে, গভীর মন্তব্য দেবার জন্য প্রয়োজন গভীরতর পর্যবেক্ষণ এবং সতর্ক পাঠ, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না।
.
আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলতে চাই, নিজের মনোভাবকে প্রকাশ করার জন্যই লিখছি – মাধ্যম নিয়ে চিন্তিত হই নি এখন পর্যন্ত। প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া ইত্যাদি একাধিক মাধ্যমে আমাকে বিচরণ করতে দেখে অনেকে বিস্মিত হতে পারেন, কিন্তু এখানেই আমার পরিচয়, যেমনটি আমার প্রোফাইল-এ আমি বলেছি। নিজেকে চেনার আজন্ম সংগ্রামে আমি এক অস্থির মানব। এক্ষেত্রে যা সত্যি নেতিবাচক হলেও তা দেখাতে আমার আপত্তি নেই। প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমেই আমি প্রকাশিত হতে চাই – যখন যা সুবিধার মনে হয়। ( বুঝেন, আমি কী কিছিমের লেখক!) সম্ভব হলে হয়তো গল্পকেও মাধ্যম হিসেবে নিতে পারি। হয়তো কোন একদিন গানও লিখে ফেলতে পারি! শিল্পীর তুলিতে রঙ নেওয়ার মতো স্বাধীনভাবে সবগুলো মাধ্যমকে আমি ব্যবহার করে দেখতে চাই, কোনটাতে আমার স্বাচ্ছন্দ্য। ভালো কথা মনে পড়েছে, হয়তো ছবিও এঁকে ফেলতে পারি কোনদিন! (পুরাই অস্থির!) উৎকর্ষতা অনেক পরের বিষয়, হয়তো তা কখনও অর্জিত হবে না। আপাতত ‘প্রকাশ ও প্রচেষ্টা’ আমার কাছে অগ্রাধিকার। হয়তো এ অগ্রাধিকার খুব তাড়াতাড়ি বদলাবে না। এ হলো নিজের লেখা সম্পর্কে সুহৃদ পাঠকের কাছে আমার বিনীত কৈফিয়ত।.

( মেহেরবানি করিয়া ব্রাকেটের কথাসমূহ ব্রাকেটের ভিতরেই রাখিবেন, বাহিরে আনিবেন না )

[১ এপ্রিল ২০১৩, অসম্পাদিত]

.

.

.

প্রথম আলো ব্লগে প্রাপ্ত মন্তব্য: (লেখাটি সরাসরি স্থানান্তরিত)

 ================================================

৫৬ টি মন্তব্য (প্রথম আলো ব্লগ)

meghneelমেঘনীল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২০:২০

মাইনুল ভাই লেখাটি পড়ে ভালো লাগলো।সুন্দর আত্ববিশ্লেষনের আর্তনির্মান।শুভকামনা ।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:১৯

প্রিয় মেঘনীলকে ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছামুছে ফেলুন
MatirMoynaমাটিরময়না০১ এপ্রিল ২০১৩, ২০:২২

মেহেরবানি করিয়া ব্রাকেটের কথাসমূহ ব্রাকেটের ভিতরেই রাখিবেন, বাহিরে আনিবেন নাআনিলে কোন জরিমানা দিতে হবে কিনা মন জানিবার চায়—উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:২২

ইহা অতীব গর্হিত কর্ম হইয়াছে, প্রিয় ভ্রাতা!
আমি তো আপনাকে বারণ করিয়াছিলাম।বারণ করিলে বুঝি আকর্ষণ বারিয়া যায়?যাই হোক, মঙ্গলে থাকিবেনমুছে ফেলুন
MatirMoynaমাটিরময়না০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:২৪

ইহা আমার বংশগত বালাই–যাহা আমাকে নিষেধ করা হইবে আমি তাহাই বেশী করিয়া করিব এবং বারংবার করিব– মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৩০

বুঝিয়াছিলাম প্রারম্ভেই….ইহা কি আপনার বিবাহের বর্ষ?
নিজেকে আরও শুদ্ধ করিতে হইবে…..মঙ্গলে থাকিবেনমুছে ফেলুন
MatirMoynaমাটিরময়না০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৪৬

প্রিয় ভ্রাতা,আমি আমার সুখ সময়, মানে আমি বলিতে চাহিতেছি — আমার বিবাহ বর্ষ আমি বহু আগে পার করিয়া আসিয়াছি। আমার মাথায় এখন পুরোদস্তুর একটা খেলার মাঠ হইয়া গিয়াছে।আপনার মঙ্গল কামনা আমি দুহস্তে তুলিয়া রাখিলান। আশা করিতেছি অচিরেই কাজে লাগিবে।আপনিও ভালো থাকিবেন– আশা করিতেছি আবারো কুশ্লাদি বিনিময় হইবে।মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

kamaluddinকামাল উদ্দিন০১ এপ্রিল ২০১৩, ২০:২২

এহেম! যা বলছিলাম…
হাছা কিনা?
কথার কথা!
বুঝেন, আমি কী কিছিমের লেখক!
পুরাই অস্থির!
……..এগুলোর কথা বলছেন তো উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:২৩

ইহা আপনি কী করিলেন, ভ্রাতঃ?
আপনাকে বারণ করিলাম কত?গুরু বুঝি এই শিক্ষা দিয়াছে আপনাকে?যাই হোক, মঙ্গলে থাকিবেনমুছে ফেলুন
BABLAমোহাম্মদ জমির হায়দার বাবলা০১ এপ্রিল ২০১৩, ২০:৩৯

গভীর মন্তব্য দেবার জন্য প্রয়োজন গভীরতর পর্যবেক্ষণ এবং সতর্ক পাঠ, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না। সহমত।
আমরা সমালোচনায় যাই না এর দুটি কারণ থাকতে পারে এক. অনেকে বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নেন না। অনেকে হালকা চটে যান। আমার সমালোচনামূলক এক মন্তব্যে হালকা করে সেটার আভাস পেয়েছিলাম। দুই. আমরা অনেকে প্রথম আর শেষ দুলাইন পড়েই মন্তব্য লিখে ফেলি—-
“খুব ভালো হয়েছে”, “দারুন”, “অসাধারণ” টাইপের দায় সারা কথা দিয়ে মন্তব্য শেষ করি। অনেকে মন্তব্য দেন দিতে হবে সেজন্য। অনেকের কথাটি কিছুটা বেমানান তবু ভালো “সময় করে পড়ে নেব”
। ইত্যাদি ইত্যাদি—
আমি মনে করি যে লেখাগুলো আমি উপভোগ করি না সেখানে মন্তব্য না দিলে তেমন কোন ক্ষতি নেই। না পড়ে ভালো হয়েছে টাইপের মন্তব্য দেয়া একটি প্রতারণা।
একদিন এক সহব্লগার দু:খভারাক্রান্ত মন নিয়ে তাঁর হতাশার কথা লিখে পোস্ট দিলেন।
“একজন মন্তব্য করে দিলেন বেশ চমৎকার হয়েছে।” অবশ্য লেখক উত্তরে যথার্থ বলেছেন- “এখানে চমৎকার কী দেখলেন?”
মইনুল ভাই, আজিব কিছু লিখলাম মনে হয়।
উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:২৫

হাহাহা! অনেক কথা বলে দিলেন বাবলা ভাই!
যথার্থ বিশ্লেষণ! নাহ্ ‘আজিব’ কিছু হয় নি।আমি নিজেও মন্তব্য দেবার চাপে থাকি না।
তবে লেখার মানই মন্তব্য প্রদানে বাধ্য করে, তখন তো আর অবিচার করতে পারি না।সুন্দর মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছা রইলোমুছে ফেলুন
Rabbaniরব্বানী চৌধুরী০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৩০

” প্রথমত নিজেকে বুঝার জন্যই আমি লিখছি। ” চমৎকার ও আমার নিজের কথাও বটে। আপনার সাথে একমত হয়ে বলি নিজেকে জানার জন্য আমার বা আমাদের অনেকের ব্লগে লেখালেখি।প্রবন্ধটি – লেখার মান উন্নয়নের জন্যই। খুব ভালো লাগলো আর জানাও হল বেশ।শুভেচ্ছা জানবেন মইনুল ভাই।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:০৩

“চমৎকার ও আমার নিজের কথাও বটে। আপনার সাথে একমত হয়ে বলি নিজেকে জানার জন্য আমার বা আমাদের অনেকের ব্লগে লেখালেখি।” এর চেয়ে প্রেরণাদায়ক আর কী হতে পারে!
তবে আপনার সাথে আমার যে মিলে, সেটা অনেক আগেই জেনেছি।রব্বানী ভাইকে শুভেচ্ছামুছে ফেলুন
fardoushaফেরদৌসা০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৫০

প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমেই আমি প্রকাশিত হতে চাই – যখন যা সুবিধার মনে হয়। ( বুঝেন, আমি কী কিছিমের লেখক!) সম্ভব হলে হয়তো গল্পকেও মাধ্যম হিসেবে নিতে পারি। হয়তো কোন একদিন গানও লিখে ফেলতে পারি! শিল্পীর তুলিতে রঙ নেওয়ার মতো স্বাধীনভাবে সবগুলো মাধ্যমকে আমি ব্যবহার করে দেখতে চাই, কোনটাতে আমার স্বাচ্ছন্দ্য। ভালো কথা মনে পড়েছে, হয়তো ছবিও এঁকে ফেলতে পারি কোনদিন! (পুরাই অস্থির!)আমার লেখা আমি লিখুমযা খুশি তাই লিখুম ( যার মনে চায় পড়বে , না পড়লে না পড়বে )

তবে আপনি কিন্তু অনেক ভাল লিখেন, হাছা কতা উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:০৫

দারুণ উৎসাহ পেলাম।আপনার ব্রাকেটের কথাও ভালো লেগেছে!ফেরদৌসা আপাকে অনেক ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছামুছে ফেলুন
aihena039আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৫৫

প্রিয় মইনুল ভাই, প্রবন্ধটির মধ্যে চিন্তার খোরাক আছে। বাবলা ভাইয়ের মন্তব্যের সাথে একমত পোষণ করছি। ব্লগের এসব সীমাবদ্ধতার কারণে আমি প্রিন্ট মিডিয়াতে বেশি লিখে থাকি। যদিও ব্লগ একটা পরিবারের মতো মনে হয় বলে এখানে একাত্মতা অনুভব করি। মুল্যবান পোস্টটির জন্য ধন্যবাদ।বার্তার জবাব পেয়েছি। দ্বিতীয় প্রশ্ন নাই। সম্মানসূচক উত্তরের জন্য ধন্যবাদ।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:০৯

ভাবনার মিল পেলে কার না ভালো লাগে!আবুহেনা ভাইকে অনেক ধন্যবাদ।মুছে ফেলুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:১০

গোলাম মোস্তফা ভাইকে ধন্যবাদ। সত্যিই আমার অনেক চা খেতে হয়মুছে ফেলুন
shahidulhaque77শাহিদুল হক০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৫৭

আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলতে চাই, নিজের মনোভাবকে প্রকাশ করার জন্যই লিখছি – মাধ্যম নিয়ে চিন্তিত হই নি এখন পর্যন্ত। প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া ইত্যাদি একাধিক মাধ্যমে আমাকে বিচরণ করতে দেখে অনেকে বিস্মিত হতে পারেন, কিন্তু এখানেই আমার পরিচয়, যেমনটি আমার প্রোফাইল-এ আমি বলেছি। নিজেকে চেনার আজন্ম সংগ্রামে আমি এক অস্থির মানব। এক্ষেত্রে যা সত্যি নেতিবাচক হলেও তা দেখাতে আমার আপত্তি নেই। প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমেই আমি প্রকাশিত হতে চাই – যখন যা সুবিধার মনে হয়। ( বুঝেন, আমি কী কিছিমের লেখক!) সম্ভব হলে হয়তো গল্পকেও মাধ্যম হিসেবে নিতে পারি। হয়তো কোন একদিন গানও লিখে ফেলতে পারি! শিল্পীর তুলিতে রঙ নেওয়ার মতো স্বাধীনভাবে সবগুলো মাধ্যমকে আমি ব্যবহার করে দেখতে চাই, কোনটাতে আমার স্বাচ্ছন্দ্য। ভালো কথা মনে পড়েছে, হয়তো ছবিও এঁকে ফেলতে পারি কোনদিন! (পুরাই অস্থির!) উৎকর্ষতা অনেক পরের বিষয়, হয়তো তা কখনও অর্জিত হবে না। আপাতত ‘প্রকাশ ও প্রচেষ্টা’ আমার কাছে অগ্রাধিকার। হয়তো এ অগ্রাধিকার খুব তাড়াতাড়ি বদলাবে না। এ হলো নিজের লেখা সম্পর্কে সুহৃদ পাঠকের কাছে আমার বিনীত কৈফিয়ত।”””””””””””””” ”””’’’’’’’’’’’এ কথাগুলো মনে হলো আমারও মনের কথা। আমি বেড়াতে চাই। ভাব জগতের প্রতিটি জায়গায়। তাতে অন্তত আমার আত্মা খুশি থাকবে। আর সত্য সব সময় সত্য। সত্যের হিসাব সকলেরই এক। আপনার প্রতিটি শব্দের সাথে সহমত ব্যক্ত করছি। সেই সাথে অনেক অনেক ধন্যবাদ আর ভালবাসা রইল।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:১৩

“সত্যের হিসাব সকলেরই এক। আপনার প্রতিটি শব্দের সাথে সহমত ব্যক্ত করছি।”
চেহারার মিলের চেয়ে চেতনার মিল মানুষকে বেশি কাছে টানে। এজন্যই ব্লগ আমার এতো প্রিয়। এখানে চেতনায় মিশে গেছি আপনার মতো কবিমনের সাথে। শুভেচ্ছা জানবেন!মুছে ফেলুন
shahidulhaque77শাহিদুল হক০১ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৫৯

এবার মন্তব্যের বিষয়ে লিখি। আমাকে আমার এক স্যার একদিন বললেন যে তুমি যদি কাউকে কিছু শিখাতে চাও তবে সমালোচনা না করে তাকে উৎসাহিত করবা। আর যদি তুমি শিখতে চাও তবে সমালোচনা করবা। আমি এ কথাটা মনে রেখে চলছি।ভালবাসা সতত।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:১৮

সুন্দর কথা! আমার ভালো লেগেছে।আমি আমার সহকর্মীদের বলি, যদি কারও ভেতরের ভালো দিকটিতে উন্নয়ন করতে চান, তবে ভালো দিকগুলোর প্রশংসা করুন আর খারাপের উন্নয়ন করতে চান তবেই সমালোচনা করুন।তবে ‘সাহিত্য সমালোচনা’ মানে নেতিবাচক মন্তব্য নয়, তা তো আপনি ভালোই জানেন। সাহিত্য সমালোচনায় ভালো-মন্দ উভয়েরই ন্যয়সঙ্গত এবং বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ থাকে।মুছে ফেলুন
shahidulhaque77শাহিদুল হক০১ এপ্রিল ২০১৩, ২৩:৩৬

এখানে দ্বিমত নেই। শুভকামনা সতত।মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:১৬

সমালোচনা আছে বলেই শিল্পে আছে উৎকর্ষতা।কবিকে আবারও ধন্যবাদ!মুছে ফেলুন
sularyআলভী০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:০৭

ব্লগের লেখা চূড়ান্ত নয়, এলেখা তো খসড়া হিসেবেই বিবেচিত।প্রিয় মইনুল ভাই আপনার ব্যতিক্রমধর্মী পোষ্ট গুলো আমাকে লেখায় উৎসাহ যোগায়। বানান এবং ব্যাকরণের জাঁতা কলে পড়ে লেখার সাহস হারিয়ে ফেলি! অনেক সময় মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ি। সে জন্য বেশ কিছু দিন লেখা পোষ্ট দেয়া থেকে বিরত আছি। চমৎকার পোষ্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ ….।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:২০

“বানান এবং ব্যাকরণের জাঁতা কলে পড়ে লেখার সাহস হারিয়ে ফেলি! অনেক সময় মনের ভাব প্রকাশের ক্ষেত্রে দ্বিধা-দ্বন্দে পড়ি।”-আমরা সকলেই প্রায় প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসেছি। সমস্যাগুলোও এক।সুন্দর মন্তব্যের জন্য আলভী ভাইকে কৃতজ্ঞতা ও শুভেচ্ছামুছে ফেলুন
sularyআলভী০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:২৬

rodela2012ঘাস ফুল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:২৩

এখনো পড়ি নাই, চোখ বুলাইয়া গেলাম
ইট্টু পরে ঘুমাইতে যাইবেন এইডা কইয়া গেলাম
বেশী রাইতে পইড়া আমি মন্তব্যাবু ভাই
এখন তবে অন্য পোস্টে ঘুইরা আসি তাই।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২০:৪৮

প্রিয় ঘাস ফুলকে শুভেচ্ছামুছে ফেলুন
baganbilas1207কামরুন্নাহার০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:৩৫

ব্লগের লেখা চূড়ান্ত নয়, এলেখা তো খসড়া হিসেবেই বিবেচিত। তৃতীয়ত, আমার বক্তব্য প্রশ্নাতীত তা কখনও দাবি করি নি, বরং পাঠককে ক্রিটিকেল হবার আহ্বান জানিয়েছি সুযোগ পেলেই। কিন্তু যে কথা অনেকবার বলেছি তা হলো, এখানে পাঠকরা খুবই সহানুভূতিশীল অন্যের অনুভূতির প্রতি চরম শ্রদ্ধাশীল; তারা সমালোচনা প্রায় করতেই চান না। এ মনোভাবকে আমি আংশিকভাবে গ্রহণ করি। তবে নানাবিধ কারণের মধ্যে এর একটি কারণ হতে পারে যে, গভীর মন্তব্য দেবার জন্য প্রয়োজন গভীরতর পর্যবেক্ষণ এবং সতর্ক পাঠ, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না।আপনার সাথে একমত। ধন্যবাদ আপনার এই বলিষ্ঠ লেখার জন্য।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২০:৪৮

কামরুন্নাহারকে ধন্যবাদ বলিষ্ঠ মন্তব্যের জন্যমুছে ফেলুন
KohiNoorমেজদা০১ এপ্রিল ২০১৩, ২২:৪২

মইনুল ভাই, খুব সত্যি কথা লিখেছেন। ভাবনা করে লিখি না কিন্তু বানান, অন্তরের ভিতরের সুক্ষ্মভাবনা আমি পরে ভাবি যা হয়তো আর পোস্টে যায় না। যখন আমার লেখা বই আকারে প্রকাশ করবো তখন ভিন্ন জিনিষ আসবে। আপনার সুচিন্তিত লেখায় সকলেই উপকৃত হবে।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২০:৫১

“মইনুল ভাই, খুব সত্যি কথা লিখেছেন। ভাবনা করে লিখি না কিন্তু বানান, অন্তরের ভিতরের সুক্ষ্মভাবনা আমি পরে ভাবি যা হয়তো আর পোস্টে যায় না। যখন আমার লেখা বই আকারে প্রকাশ করবো তখন ভিন্ন জিনিষ আসবে। আপনার সুচিন্তিত লেখায় সকলেই উপকৃত হবে।” মেজদাকে অনেক ধন্যবাদ প্রেরণাদায়ক মন্তব্যের জন্য।ভালো থাকুন, প্রিয় গীতিকারমুছে ফেলুন
asrafulkabirআশরাফুল কবীর০১ এপ্রিল ২০১৩, ২৩:২২

কিন্তু যে কথা অনেকবার বলেছি তা হলো, এখানে পাঠকরা খুবই সহানুভূতিশীল অন্যের অনুভূতির প্রতি চরম শ্রদ্ধাশীল; তারা সমালোচনা প্রায় করতেই চান না। এ মনোভাবকে আমি আংশিকভাবে গ্রহণ করি। তবে নানাবিধ কারণের মধ্যে এর একটি কারণ হতে পারে যে, গভীর মন্তব্য দেবার জন্য প্রয়োজন গভীরতর পর্যবেক্ষণ এবং সতর্ক পাঠ, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না।#শুভেচ্ছা আপনাকে প্রিয় মাঈনউদ্দীন মইনুল ভাই আলোচনামূলক একটি পোস্ট দেয়ার জন্য#“এখানে পাঠকরা খুবই সহানুভূতিশীল অন্যের অনুভূতির প্রতি চরম শ্রদ্ধাশীল; তারা সমালোচনা প্রায় করতেই চান না…..প্রথম আলো ব্লগের বোধ হয় বিশেষত্ব এটাই, এখানে সৌহার্দ্যের পরিমান অন্য ব্লগের তুলনায় বেশী…অন্য ব্লগেও সৌহার্দ্য রয়েছে তবে তা প্রথম আলো ব্লগের মতো এতোটা দৃঢ় নয়।#এবার আসি সমালোচনার ব্যাপারে…সমালোচনার ব্যাপারে প্রয়োজন প্রখর দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা, পাঠাভ্যাস সর্বোপরি রেলিভ্যান্ট ফিল্ডে এক্সপার্ট যারা তাদের…যা আপনি আপনার আংশিকভাবে গ্রহণ করার মনোভাবের মাধ্যমে উন্মোচন করেছেন..ভালো লেগেছে আপনার অভিব্যক্তি..একটু অফটপিকে যাই..আমার জানাশোনা এবং স্বল্পায়ু ব্লগিংয়ের অভিজ্ঞতায় দেখেছি অধিকাংশ নামকরা ব্লগে সমালোচনার নামে যা হয় তা হলো গালাগালি (প্রথমে কিছুটা ভালোভাবে শুরু হয় অত:পর…….ভালো কিছু আছে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল)

#সমালোচনার জন্য আমার একটি অনুভূতি আপনি কিছুটা প্রকাশ করেছেন এ লাইনের মাধ্যমে “ভাষার শুদ্ধতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা লেখকের জন্য শুরুতেই জরুরি নয়। জরুরি হলো নিজেকে প্রকাশ করার আকুতি নিবৃত্ত করা” পাঠক হিসেবে অবশ্যই সমালোচনা করার অধিকার আছে তবে তা করার পূর্বে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরী (আমি জানি আমার নেই, তাই করিনা), ইতোপূর্বে অনেকেরই এ বিষয়ে লেখা গোচরীভূত হয়েছে তবে বলার সুযোগ পাইনি..আমার মতে কোন একটি ফিল্ডকে বুঝতেও সময় লাগে বছর তিনেক..তাই পর্যাপ্ত সময় না নিয়েই তাড়াহুড়ো করা আমার মতের বাইরে।

#একটি ফিল্ডে আমি হুট করে একটি কমেন্ট করতে পারি (যা সমালোচনার কাভারে আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে) আমি ভাবছি আমি কমেন্টের মাধ্যমে একটি বিষয়কে কেন্দ্র কর সমালোচনা করেছি কিন্তু তা পোস্টদারীর বক্তব্যের বাইরেও চলে যেতে পারে আর যদি নাও যায় তাহলেও তার লেখার প্ল্যাটফর্মে হানতে পারে বিশাল আঘাত যা কোনভাবেই কাম্য নয়..আমার করা কোন একটি কমেন্টের জন্য সেই ব্লগারের লেখার প্রতি কাজ করতে পারে চরম বিতৃষ্ণা..হয়তোবা কমে যেতে পারে পোস্টের সংখ্যা। ব্যাপারটি কিন্তু খুবই দু:খজনক হবে তখন। হ্যাঁ..বলতে পারেন কারো সমালোচনায় সেই ব্লগারের লেখার উৎকর্ষ সাধন হতে পারে প্রাথমিক সময় থেকে, পেতে পারে উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনা তবে সেখানেও সমস্যা আসবে..তিনি কতোটুকু ভাল জানেন সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়।

#আমার মনে হয় “এখানে/ওখানে কেউ সমালোচনা করেনা” এ ধরনের গন্ডিতে আমাদের বক্তব্যকে আটকে না রেখে..নিজে নিজেই শুরু করিনা কেনো? আপনিই শুরু করুননা..আপনাকে (প্রিয় ব্লগ রত্নকে) দেখে দেখে যদি আমরা কিছুটা শিখতে পারি….কারন “উৎকর্ষতা অনেক পরের বিষয়” অন্তত আমি আমার কথা বলতে পারি..এখনো ব্লগিংয়ের এলিমেন্টারি লেভেলেই আছিতো।

#ভাল থাকুন..আপনার সাবমিসিব মুড ভালো লেগেছে..জয়তু প্রথম আলো ব্লগিংউত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২০:৫৮

#“এখানে পাঠকরা খুবই সহানুভূতিশীল অন্যের অনুভূতির প্রতি চরম শ্রদ্ধাশীল; তারা সমালোচনা প্রায় করতেই চান না…..প্রথম আলো ব্লগের বোধ হয় বিশেষত্ব এটাই, এখানে সৌহার্দ্যের পরিমান অন্য ব্লগের তুলনায় বেশী…অন্য ব্লগেও সৌহার্দ্য রয়েছে তবে তা প্রথম আলো ব্লগের মতো এতোটা দৃঢ় নয়।
-একমত। #এবার আসি সমালোচনার ব্যাপারে…সমালোচনার ব্যাপারে প্রয়োজন প্রখর দৃষ্টিভঙ্গি, অভিজ্ঞতা, পাঠাভ্যাস সর্বোপরি রেলিভ্যান্ট ফিল্ডে এক্সপার্ট যারা তাদের…যা আপনি আপনার আংশিকভাবে গ্রহণ করার মনোভাবের মাধ্যমে উন্মোচন করেছেন..ভালো লেগেছে আপনার অভিব্যক্তি..একটু অফটপিকে যাই..আমার জানাশোনা এবং স্বল্পায়ু ব্লগিংয়ের অভিজ্ঞতায় দেখেছি অধিকাংশ নামকরা ব্লগে সমালোচনার নামে যা হয় তা হলো গালাগালি (প্রথমে কিছুটা ভালোভাবে শুরু হয় অত:পর…….ভালো কিছু আছে তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল)
-একমত। আমিও এমন দেখেছি।

#সমালোচনার জন্য আমার একটি অনুভূতি আপনি কিছুটা প্রকাশ করেছেন এ লাইনের মাধ্যমে “ভাষার শুদ্ধতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা লেখকের জন্য শুরুতেই জরুরি নয়। জরুরি হলো নিজেকে প্রকাশ করার আকুতি নিবৃত্ত করা” পাঠক হিসেবে অবশ্যই সমালোচনা করার অধিকার আছে তবে তা করার পূর্বে পর্যাপ্ত জ্ঞান থাকা জরুরী (আমি জানি আমার নেই, তাই করিনা), ইতোপূর্বে অনেকেরই এ বিষয়ে লেখা গোচরীভূত হয়েছে তবে বলার সুযোগ পাইনি..আমার মতে কোন একটি ফিল্ডকে বুঝতেও সময় লাগে বছর তিনেক..তাই পর্যাপ্ত সময় না নিয়েই তাড়াহুড়ো করা আমার মতের বাইরে।
-দায়িত্বশীল মনোভাব দেখালেন। এরকম যুক্তি থাকলে আলাদা কথা।#একটি ফিল্ডে আমি হুট করে একটি কমেন্ট করতে পারি (যা সমালোচনার কাভারে আসতেও পারে আবার নাও আসতে পারে) আমি ভাবছি আমি কমেন্টের মাধ্যমে একটি বিষয়কে কেন্দ্র কর সমালোচনা করেছি কিন্তু তা পোস্টদারীর বক্তব্যের বাইরেও চলে যেতে পারে আর যদি নাও যায় তাহলেও তার লেখার প্ল্যাটফর্মে হানতে পারে বিশাল আঘাত যা কোনভাবেই কাম্য নয়..আমার করা কোন একটি কমেন্টের জন্য সেই ব্লগারের লেখার প্রতি কাজ করতে পারে চরম বিতৃষ্ণা..হয়তোবা কমে যেতে পারে পোস্টের সংখ্যা। ব্যাপারটি কিন্তু খুবই দু:খজনক হবে তখন। হ্যাঁ..বলতে পারেন কারো সমালোচনায় সেই ব্লগারের লেখার উৎকর্ষ সাধন হতে পারে প্রাথমিক সময় থেকে, পেতে পারে উল্লেখযোগ্য দিকনির্দেশনা তবে সেখানেও সমস্যা আসবে..তিনি কতোটুকু ভাল জানেন সে ব্যাপারে প্রশ্ন থেকে যায়।
-দায়িত্বশীল মন্তব্য দিলে এমনটা হবার সুযোগ নেই। ব্যক্তিকে নয়, লেখাকে কেন্দ্র করে আলোচনা চললে, তা খারাপের দিকে যাবার কথা নয়। প্রচলিত অর্থে সমালোচনা বলতে যা বুঝায়, সাহিত্য সমালোচনা তো তা নয়। আপনি জানেন যে, সাহিত্যে যুক্তিসংগতভাবে লেখকের প্রশংসা করলেও সেটা ‘সমালোচনা’।#আমার মনে হয় “এখানে/ওখানে কেউ সমালোচনা করেনা” এ ধরনের গন্ডিতে আমাদের বক্তব্যকে আটকে না রেখে..নিজে নিজেই শুরু করিনা কেনো? আপনিই শুরু করুননা..আপনাকে (প্রিয় ব্লগ রত্নকে) দেখে দেখে যদি আমরা কিছুটা শিখতে পারি….কারন “উৎকর্ষতা অনেক পরের বিষয়” অন্তত আমি আমার কথা বলতে পারি..এখনো ব্লগিংয়ের এলিমেন্টারি লেভেলেই আছিতো।

-আমি শুধু ‘শুরু’ করি নি, নিয়মিতভাবেই করার চেষ্টাই করি। তাতে লেখক বা পোস্টদাতার সাথে আমার সম্পর্কের অবনতি ঘটে নি। এসব প্রকাশ করে পোস্টদাতাকে প্রশ্নের সম্মুখীন করতে চাই না। ভিন্নমত পোষণ করেছি এরকম দু’টি লেখার লিংক আপনাকে বার্তায় পাঠালাম।

প্রিয় আশরাফুল কবীর ভাই, নিরামিষ মন্তব্য আপনি নিজেও করেন না, তা আমার লেখায় আপনার মন্তব্যে দেখতে পাই। কিন্তু, শুধু একটি ইমোটিকোন দিয়ে একটি সাহিত্যকর্মের প্রতি মতামত প্রকাশ করা যায়?

তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য দিয়ে আপনি সবসময়ই আমার লেখাকে করেছেন সমৃদ্ধ। এবারও ব্যতিক্রম করেন নি। কৃতজ্ঞতা!

ভালো থাকুন, কবি!মুছে ফেলুন

MirHamidহামি্দ০১ এপ্রিল ২০১৩, ২৩:৪৭

ভালো লাগলো লেখাটি।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:০০

ভাই হামিদ, আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটিতে মতামত দেবার জন্য! মুছে ফেলুন
Rjamilরশীদ জামীল০১ এপ্রিল ২০১৩, ২৩:৫৪

সালাম মইনুল ভাই। লেখাটা হচ্ছে প্রকৃতির একটি দান। অনেক বেশি শিক্ষিত হলেই লেখক হওয়া যায় না। আবার খুব বেশি পড়ালেখা না করেও অনেকে ভাল লেখক হয়ে উঠে। এ জন্য লেখা যখন যাকে যেভাবে ডাকে, সেভাবেই সাড়া দেয়া উচিত। সেটা গদ্য হোক আর পদ্য।আপনি যেসব বিষয়েই লিখছেন, সবগুলোতেই পূর্ণতার ছাপ বিদ্যমান।
না, গতানুগতিক ধারায় বলছি না। একদম সত্যটাই বলছি।
সো, লিখে যান। পাশে আছি, পাঠক হয়ে।——————-উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
rodela2012ঘাস ফুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ০৪:৫৩

বেডাডায় খালি বুইরা আঙ্গুল দেহাইব। দিমুনে একদিন মোচর দিয়া ভাইঙ্গা। তহন টের পাইব নে। মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:২১

“লেখাটা হচ্ছে প্রকৃতির একটি দান। অনেক বেশি শিক্ষিত হলেই লেখক হওয়া যায় না। আবার খুব বেশি পড়ালেখা না করেও অনেকে ভাল লেখক হয়ে উঠে। এ জন্য লেখা যখন যাকে যেভাবে ডাকে, সেভাবেই সাড়া দেয়া উচিত। সেটা গদ্য হোক আর পদ্য।”আহা! লিখে রাখার মতো, বান্ধিয়ে রাখার মতো কথা!
আমার পোস্টের লেখাগুলো মুছে শুধু এ দু’টি লাইন দিলেই সব কথা বলা হয়ে যাবে।প্রিয় রশীদ জামীল ভাইকে অনেক শুভেচ্ছা!!মুছে ফেলুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:২৯

দুষ্টু ছোটভাই ঘাসফুলকেও শুভেচ্ছা!মুছে ফেলুন
Sagar33সাগর মন্ডল০২ এপ্রিল ২০১৩, ০০:৩১

Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:০১

সুন্দর ফুলে ধন্যবাদ জানিয়ে কৃতজ্ঞ করলেন, ভাই সাগর মণ্ডল!
আপনাকে অনেক শুভেচ্ছামুছে ফেলুন
vuterachorভূতের আছড়০২ এপ্রিল ২০১৩, ০০:৫৭

ভালো লাগলো
তবে বেরাকেটের ভিত্রের বিষয় ভিত্রে রাখসি ভালো থাকতে ভুল হয়না যেনো?উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:০২

“তবে বেরাকেটের ভিত্রের বিষয় ভিত্রে রাখসি”কথা রাখার জন্য ধন্যবাদ, প্রিয় ভুত ভাই!ভালো থাকতে ভুল করবো না,
আপনিও যেন না করেন!মুছে ফেলুন
rodela2012ঘাস ফুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ০৪:৫০

মইনুল ভাই সালাম নিবেন।
এই পর্যন্ত আপনার যত লেখা পড়েছি, তার সবগুলোর মধ্যেই আন্তরিকতা, গভীরতা এবং শিক্ষণীয় কিছু পেয়েছি। আমার তো মনে হয়, যদি আপনি যত্ন নিয়ে লিখেন (যদিও লিখেন) তাহলে সাহিত্যের যে কোন শাখায়ই আপনি নিঃসন্দেহে ভালো করবেন। কারণ আপনার মধ্যে সবই আছে। এখন শুধু দরকার সেটা লেখনীর মাধ্যমে পাঠকের সাথে শেয়ার করা। যা দ্বারা পাঠক উপকৃত হবে। মন্তব্যের ব্যাপারে যা বলেছেন তাতে সহমত জানালাম। সমালোচনামূলক মন্তব্যের ভালো এবং মন্দ দুটো দিকই আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, আমরা শুধু মন্দটাই দেখি, ভালোটা বুঝার চেষ্টা করি না। আর সেই জন্য শেষ পর্যন্ত আর লেখক হওয়া হয়ে উঠে না। আমি অনেককেই বলেছি, আমি পুরো লেখা না পড়ে মন্তব্য করি না। তারপরেও মন্তব্যে যদি কোন ভুল হয়ে থাকে সেটা আমার না বুঝার ভুল। হয়তো আমি লেখাটিকে ঠিক মতো বুঝতে পারি নাই। এখানে লেখকের কোন দোষ নাই। আবার কিছু লেখা আছে যেখানে আসলে বলার মতো কিছুই থাকে না অথবা লেখাটি এতোই তথ্যবহুল যে, নতুন করে যোগ করার সেখানে কিছুই নাই। সেই ক্ষেত্রে আপনাকে চমৎকার, দারুণ, অসাধারণ, অপূর্ব, মুগ্ধ বা সহমত এইধরনের শব্দই ব্যবহার করতে হবে। আসলে সব কিছুই নির্ভর করে লেখার ওপরে। অনেক কিছুই বলার ছিল, কিন্তু অনেকেই বলে গেছেন। তাই আর কষ্ট করে ওমুখো পা বাড়ালাম না। আমি আবার কিছুটা অলস কিছিমের। আত্মসমালোচনামূলক কিন্তু আমাদের জন্য শিক্ষণীয় সুন্দর এই পোস্টের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ মইনুল ভাই। আমি কিন্তু ভিত্রের লেখা আরও ভিত্রে হান্দাইয়া দিছি। কিনুতা পেরকাশ করি নাই।উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:১৪

“সমালোচনামূলক মন্তব্যের ভালো এবং মন্দ দুটো দিকই আছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের ব্যাপার হল, আমরা শুধু মন্দটাই দেখি, ভালোটা বুঝার চেষ্টা করি না। আর সেই জন্য শেষ পর্যন্ত আর লেখক হওয়া হয়ে উঠে না।”
—————————সহমত। আপনি তো জানেন প্রশংসা করতে বেশি চিন্তাশীল হবার প্রয়োজন নেই, সমালোচনা করতে গেলে সত্যিই লেখাটিকে ভালোমতো পর্যবেক্ষণ করতে হয়, ক্রসচেকিং করতে হয়।প্রশংসা সহজ, কিন্তু সমালোচনা কঠিন।প্রশংসায় লেখককে কিছু উপকার তো করেই, কিন্তু প্রকৃত উপকার করে সমালোচনায়। সমালোচনা করার জন্য একটু বাড়তি খাটনিও আছে।

একজন সমালোচক বলে দিতে পারেন, কোথায় আপনার জোর কোথায় আপনার কমজোর। কোথায় দক্ষতা আর কোথায় দুর্বলতা। সাহিত্যের, পটভূমির, ভাষার ইত্যাদির।

সমঝদার সমালোচক কিন্তু এর জন্য মায়েনাও দাবি করতে পারেন এবং এযুগে তা করেও।

সমালোচনাই যুগে যুগে সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ ও অলংকৃত। সমালোচনা আছে বলেই শিল্পে আছে উৎকর্ষ!

আমার লেখা সম্পর্কে আপনার উদার প্রশংসার জন্য অশেষ ধন্যবাদ, প্রিয় ঘাসফুল। ভালো থাকুন!মুছে ফেলুন

rodela2012ঘাস ফুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৫৫

প্রশংসায় লেখককে কিছু উপকার তো করেই, কিন্তু প্রকৃত উপকার করে সমালোচনায়। সমালোচনা করার জন্য একটু বাড়তি খাটনিও আছে। একজন সমালোচক বলে দিতে পারেন, কোথায় আপনার জোর কোথায় আপনার কমজোর। কোথায় দক্ষতা আর কোথায় দুর্বলতা। সাহিত্যের, পটভূমির, ভাষার ইত্যাদির।সমঝদার সমালোচক কিন্তু এর জন্য মায়েনাও দাবি করতে পারেন এবং এযুগে তা করেও। সমালোচনাই যুগে যুগে সাহিত্যকে করেছে সমৃদ্ধ ও অলংকৃত। সমালোচনা আছে বলেই শিল্পে আছে উৎকর্ষ!

মুছে ফেলুন | ব্লক করুন

charumannanচারুমান্নান০২ এপ্রিল ২০১৩, ১৩:৩৯

বিষদ আলোচনা সমালোচনা,,,,,,,,,,,,,,,,,
আমাদের অস্তিত্বের শিকড় নড়ে উঠল,,,,,,,,,একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে
উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:১৭

কবিকে শেষ বসন্তের শুভেচ্ছামুছে ফেলুন
sopnerdin45এনামুল রেজা০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:০৬

হুম। কিন্তু আমি নিজের একটা ব্যপার কিছুটা ধরতে পেরেছি। যেকোন লেখাই মজা নিয়ে পড়লেই পর মজা করে নিজের লেখাটা জরুরি। মানে মনযোগি পাঠক হওয়াটা ভাব প্রকাশের জন্য মবিল হিসেবে কাজ করে….উত্তর দিন | মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:১৯

“কিন্তু আমি নিজের একটা ব্যপার কিছুটা ধরতে পেরেছি। যেকোন লেখাই মজা নিয়ে পড়লেই পর মজা করে নিজের লেখাটা জরুরি। মানে মনযোগি পাঠক হওয়াটা ভাব প্রকাশের জন্য মবিল হিসেবে কাজ করে….”-মূল্যবান কথা! প্রিয় অরিত্র অন্বয় ভাইকে শুভেচ্ছা!
ভালো থাকুন বসন্তের শেষ দিনগুলোতেমুছে ফেলুন
sopnerdin45এনামুল রেজা০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:২২

ওয়ার্ড এলোমেলো কেমনে হইলো কে যানে!
মজা নিয়ে পড়তে পারলেই নিজের লেখাটা মজা করে লেখা যায়।আপনিও খুব ভাল থাকুন সব সময়।শুভেচ্ছা আর ভালবাসা।মুছে ফেলুন | ব্লক করুন
Maeenমাঈনউদ্দিন মইনুল০২ এপ্রিল ২০১৩, ২১:৩০

 

================================================

 

Blogging Ideas: ব্লগ লেখার কৌশল

ক] ব্লগ লেখার প্রচলিত বিষয়গুলো

————————————————————————————————————————————–

.

কী নিয়ে ব্লগ লিখবো, এটি একটি অবান্তর প্রশ্ন। বলা উচিত ‘কী উদ্দেশ্যে’ ব্লগিং করবো। উদ্দেশ্য ঠিক করা থাকলে, ব্লগিংএর বিষয় এমনিতেই চলে আসে। সৃজনশীল লেখক/ব্লগাররা তো লেখতে লেখতে আঙ্গুলে ব্যথা করে, তবু তাদের ভাবের নির্গমন শেষ হয় না। সহজ বিষয়ে গুরুগম্ভীর অনুচ্ছেদ না লিখে, সরল উপস্থাপনায় তুলে ধরলাম। উদ্দেশ্য: আড্ডার খোরাক যোগানো।

ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে লিখতে পারেন:

১) ব্যক্তিগত মূল্যবোধ: আপনি যা বিশ্বাস করেন বা মেনে চলেন

২) কোন স্মরণীয় ঘটনা, যা থেকে আপনি অনেক কিছু শিখেছেন, অনেক চেতনা পেয়েছেন

৩) আপনার অনাগত সন্তানকে লক্ষ্য করে একটি চিঠি লিখতে পারেন

৪) কোন খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করে থাকলে, সেটা কীভাবে ত্যাগ করতে পেরেছেন লিখতে পারেন

৫) বাল্যস্মৃতি বা ছোটকালের কোন স্মরণীয় ঘটনা বা দুর্ঘটনা

‘সেরা’ নিয়ে লিখুন: সেরা হয়ে যান

৬) আপনার দেখা সেরা সিনেমা অথবা আপনার পড়া সেরা বইটি/ ব্লগপোস্ট

৭) আপনার চোখে সেরা লেখক/রাজনীতিক/পেশাজীবি/শিক্ষক/ক্রিকেটার/ব্লগার ইত্যাদি

৮) আপনার অভিজ্ঞতায় সেরা অ্যাপস/ওয়েবসাইট/প্রযুক্তি ইত্যাদি

৯) সপ্তাহের আলোচিত সংবাদটি নিয়ে একটি বিশ্লেষণী মন্তব্য লিখতে পারেন

১০) পৃথিবীর সেরা ব্যক্তি/বিষয়টিকে কেন আপনার ‘সেরা’ মনে হয় না, তা নিয়ে লিখুন

.

.

সাক্ষাৎকার বা অনুসন্ধানী লেখা

১১) দেশের ‘পাগলাটে গার্মেন্টস শিল্পটিকে’ কীভাবে বাঁচানো যায়, তা নিয়ে অনুসন্ধান করুন

১২) বিশেষ পেশা বা ব্যতিক্রমী জীবনের কোন ব্যক্তির সঙ্গে অন্তরঙ্গ আলাপে লিপ্ত হোন

১৩) বাংলা ব্লগের সাথে অন্য কোন বিখ্যাত ভাষায় লিখিত পাবলিক ব্লগের সাথে তুলনা খুঁজুন

১৪) চল্লিশ-ঊর্ধ্ব এবং ষাটের নিচের বয়সী নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সাক্ষরতা দান করা যায় প্রস্তাব লিখুন

১৫) পৃথিবীর উন্নত গণতন্ত্রের দেশগুলো নেতানেত্রীদের আচরণ ও রাজনৈতিক পরিবেশ অনুসন্ধান করে একটি তুলনামূলক বিশ্লেষণ হাজির করতে পারেন

সৃজনশীল লেখা

১৬) আপনার শিক্ষা/কর্মজীবনের মজাদার ব্যক্তিটিকে নিয়ে লিখুন

১৭) প্রবাস জীবনের ব্যতিক্রমী বিষয়গুলো যা স্বদেশে দুষ্প্রাপ্য/অকল্পনীয়

১৮) প্রবাস জীবনের হতাশাগুলো যা স্বদেশে থাকলে ভিন্নরকম হতো

১৯) ঘুনেধরা ও বিপদগ্রস্ত রাজনীতিকে উন্নয়নের দিশা দিন (তবে সাবধানে!)

২০) এসিডদগ্ধ মেয়ে বা অপহৃত শিশুর মানসিক যন্ত্রণাকে তুলে ধরে গল্প

…. এরকম চলতে থাকবে শত থেকে সহস্র পর্যন্ত, অথবা আরও দূরে!

ব্লগিং আইডিয়া নিয়ে আলোচনা করতে করতে সমাজের অনেক ত্রুটি-বিচ্যুতির বিষয় মনে পড়ে গেলো। আজ সব লিখলাম না। আমার মনে হয় এবিষয়ে আড্ডা হতে পারে সহব্লগারদের মধ্যে। তুমুল আড্ডা! ব্লগ পোস্ট হোক বা না হোক, কিছু প্রণিধানযোগ্য বিষয় ওঠে আসবে সকলের সামনে। এবিষয়ে আজ আর বেশি না বলে, সকলের ব্লগারের অংশগ্রহণ কামনা করছি।

.

.

.

খ] স্টিকি পোস্ট কীভাবে লেখবেন?

————————————————————————————————————————————–

.

একটি স্টিকি পোস্ট লেখতে খুব মুনচায়, যেমন মুনচায় রবীন্দ্র সঙ্গীত লেখতে! আইয়ুব আমলে দেশের সুশীল সমাজে রবি বাবুর প্রভাব ‘সইহো’ করতে না পেরে রবীন্দ্র সঙ্গীত লেখার জন্য চাপ আসে বাংলা একাডেমি’র ওপর। তখন জনৈক আব্দুল হাই সাহেব বিনম্র প্রতিবাদে জানালেন, “স্যার, রবীন্দ্র সঙ্গীত তো কেবল রবি বাবুই লেখতে পারবেন। আমি লেখলে তা হবে হাই সঙ্গীত।” স্টিকি পোস্ট লেখা আবার সেরকম কঠিন নয় – ব্লগের গতিধারা বুঝতে পারলে সকলেই তা লিখতে পারেন। অনেক ব্লগার আছেন, তারা নিয়মিত স্টিকি পোস্ট লিখে যাচ্ছেন! (অবশ্য সব লেখাই স্টিকি হয়না!) এখানে লেখকের স্বাধীনতা একটু খর্ব হয় বটে। তবু অনেকেই চান তার লেখাটি ব্লগের ব্যানারের নিচে শোভা পাক। মানসম্মত লেখা হলে গল্প-কবিতাও কি স্টিকি হয়না? হওয়া উচিত। কিন্তু লেখায় কী থাকলে সেই পোস্ট স্টিকি হবে?

প্রশ্ন হলো, ১) স্টিকি পোস্ট লেখবো, নাকি ২) নিজের মতোই লিখে যাবো, স্টিকি হোক বা না হোক?  নিজে দ্বিতীয় শ্রেণীর লেখক হবার কারণে ব্যক্তিগতভাবে আমি দ্বিতীয় তন্ত্রে বিশ্বাসী। তবু ‘প্রথম তন্ত্রে’ যারা একটু সময়ের জন্যও বিশ্বাস করেন, তাদের ‍বিষয়ে এই আলোচনা।

পোস্ট স্টিকি করা বা কোন ‘লেখা নিয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করার বিষয়টি’ অনেকাংশেই নির্ভর করে ব্লগ কর্তৃপক্ষের মন-মেজাজ এবং তাদের সম্পাদকীয় নীতিমালার ওপর। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশের অধিকাংশ ব্লগেই ‘পোস্ট দৃষ্টি আকর্ষণে নেবার জন্য’ কোন সু্স্পষ্ট/লিখিত নীতিমালা বা স্ট্যান্ডার্ড নেই। তারা অনেকাংশেই বিশেষ দিন,  বিশেষ ব্যক্তি এবং বিশেষ ঘটনাবলীর ওপর ভিত্তি করে লেখায় অনুমোদন দেন। এক্ষেত্রে হয় তারা ব্লগার বা পোস্টদাতা কর্তৃক প্রভাবিত হন, নয়তো নিজেদের খেয়াল-খুশি বা মুখ-চেনা লেখক দ্বারা পরিচালিত হন।

উপরোক্ত পরিস্থিতিতে কীভাবে ‘স্টিকি পোস্ট’ লেখা যায়, সে সম্পর্কে কিছু ‘মনগড়া’ আলোচনা করছি।পাঠক এখানে সম্পূর্ণ দ্বিধাহীনভাবে অংশ নিয়ে মন-খোলা মন্তব্য দিতে পারেন।

১) জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিশেষ দিন: এখানে খেয়াল রাখতে হবে দেশের চলমান আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে কোন্ দিকটি বেশি প্রাসঙ্গিক। অহেতুক তথ্যের পুনরাবৃত্তি কেউ পছন্দ করে না।

২) বিশেষ ব্যক্তির জন্ম/মৃত্যু দিবস: কোন খ্যাতিমান ব্যক্তির মৃত্যু হলে, তখন মৃত্যু দিবসটিই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মৃত ব্যক্তিকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো হাস্যকর। তাদের জন্য শ্রদ্ধাঞ্জলি/ট্রিবিউট জানানোটাই বেশি প্রাসঙ্গিক।

৩) চলমান ঘটনাবলী নিয়ে বিশ্লেষণী লেখা: চলমান ঘটনাবলী নিয়ে বিশ্লেষণ করতে হলে যথেষ্ট পূর্বজ্ঞান থাকা চাই। খবরের কাগজ থেকে কপি-পেইস্ট করলে, সেই পোস্ট কিন্তু স্টিকি হবে না!

৪) চলমান রাজনৈতিক/সামাজিক পরিস্থিতি নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক/রসাত্মক বস্তুনিষ্ট লেখা: রাজনৈতিক বিষয়ে লেখতে গেলে সাবধান! পর্যাপ্ত তথ্য, যুক্তি এবং ঐতিহাসিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে না পারলে ‘জীবনের মতো’ দাগি ব্লগারে রূপান্তরিত হতে হবে।

৫) ব্লগে গুরুত্বপ্রাপ্ত প্রকাশিত লেখাকে বিবেচনায় আনা: সংশ্লিষ্ট ব্লগে কোন্ ধরণের লেখাকে এপর্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, বা বেশি পড়া হয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করলে ফায়দা আছে বহুত!

.

.

লেখা স্টিকি করা বা নির্বাচিত কলামে নেবার বিষয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষ যা করতে পারেন

ক) কোন্ লেখা ব্লগ কর্তৃপক্ষ গুরুত্ব দেন তা সাধারণ ব্লগারদেরকে বুঝতে দেওয়া।

খ) নির্বাচিত কলামে লেখা দেবার বিষয়ে সুস্পষ্ট নীতিমালা থাকা এবং তা প্রকাশ করা।

গ) লেখা স্টিকি করার বিষয়ে যুক্তিসংগত নীতিমালা থাকা এবং তা প্রকাশ করা।

ঘ) মুখ চিনে মুগেরডাল না দেওয়া।

ঙ) নবীন লেখক বা নবাগত ব্লগারকে এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য ‘উদার’ নীতিমালা থাকা।

বাংলা ভাষায় এমন ব্লগও আছে, যেখানে সঞ্চালকের লেখাই স্টিকি হয়ে থাকে সপ্তাহের পর সপ্তাহ ধরে। নির্বাচিত কলামেও থাকে তারই লেখা, অথবা তার কোন নিকাটাত্মীয়ের। একটি ব্লগের চরিত্র এবং এর গতিপথকে বুঝতে পারা যায় তাদের ‘লেখা নির্বাচনের’ নমুনা দেখে। এসব বিষয়ে ব্লগ কর্তৃপক্ষ যত স্বচ্ছ হবে, ব্লগের এগিয়ে চলা হবে ততই মসৃণ। আমি মনে করি, লেখক সত্ত্বার বিকাশ ঘটে অন্তরে-সৃষ্ট প্রেরণা থেকে; কিন্তু ব্লগার সত্ত্বার সৃষ্টিতে সংশ্লিষ্ট ব্লগ কর্তৃপক্ষের কিছুটা হলেও অবদান থাকে – কম হলেও এর প্রভাব অপরিসীম।

.

.

.

————————————————————————————————————————————–

[ ব্লগ লেখার কৌশল সম্পর্কে আরও জানতে ]

Pathos: সাহিত্য রচনায় বিষাদের ব্যবহার

এক) রাজা এগামেমননের সাথে মতের অমিল হওয়ায় গ্রিসের পক্ষে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়া বন্ধ করে দিলেন মহাবীর একিলিস। এরপর থেকে একটির পর একটি মৃত্যু এবং পরাজয়ের খবর আসতে লাগলো। কিন্তু কিছুতেই আর একিলিসকে যুদ্ধে নিয়ে যেতে পারবে না। মেনেলাউসের স্ত্রী হেলেনকে উদ্ধারের জন্য সৃষ্ট বিরোধ এখন তার বড়ভাই এগামেমননের রাজ্য-জয়ের অভিলাষের সাথে যুক্ত হয়ে বিশাল যুদ্ধের কারণ হয়েছে। তাছাড়া, রাজা এগামেমননকে একিলিসের একেবারেই না-পছন্দ – লোভী এবং দুশ্চরিত্র। যুদ্ধবন্দী সুন্দরী ব্রাইসিসকে কেড়ে নেওয়া ছিল প্রতিহিংসার বড় কারণ। কেন শুধু একজনের রাজ্য বিস্তারের জন্য যুদ্ধ করা? ওদিকে এগামেমনন প্রবল অহংকারী এক রাজা। তার মতে, একিলিসের নিয়তিই হলো যুদ্ধ করা, সে যোদ্ধা আর এগামেমনন হলেন রাজা। তিনি তার রাজাসুলভ ব্যক্তিত্বকে নিচে নামিয়ে একিলিসকে ফের অনুরোধ করেন নি। উভয়ের বন্ধু ওডিসিউস মধ্যস্থতা করেও একিলিসকে রাজি করাতে পারলেন না।

অন্যদিকে গ্রিসের সকল অঙ্গরাজ্যের সকল সৈন্যরা একে ‘দেশের জন্য যুদ্ধ’ বলে মেনে নিয়েছে। মেনে নিয়েছে একিলিসের বিশ্বস্ত সহচর এবং অনুগত শিষ্য পেটরোক্লাসও। ট্রয়ের যোদ্ধারা এতো আগ্রাসী আর কখনও হয় নি। হাতে তৈরি গোলা গুলো মার্বেলের মতো গড়িয়ে এসে গ্রিকদের তাবুগুলো পুড়িয়ে দিতে লাগলো। তারা বুঝতে পেরেছে গ্রিকদের সাথে একিলিস নেই। কিন্তু একিলিসকে সে কোনভাবেই যুদ্ধে ফেরাতে পারছে না। অগত্যা তারই যু্দ্ধপোশাক বর্ম ঢাল মস্তকাবরণী পড়ে সে যুদ্ধে যোগ দেয়। এটিই তার জন্য মরণফাঁদ ডেকে এনেছে। হেকটরসহ ট্রয়ের সকলেই ধরে নিয়েছে যে, আজ একিলিস যুদ্ধে নেমেছে। একই বিশ্বাসে নিজ দেশের সৈন্যরাও আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলো। এক পর্যায়ে হেকটর এসে তাকে চ্যালেন্জ করলে পেটরোক্লাস তা প্রত্যাখ্যান করা কাপুরুষোচিত মনে করলো। বেশ কিছু সময় প্রতিরোধ করার পর মহাবীর হেকটরের হাতে পেটরোক্লাস নিহত হয়। মরণ আঘাত দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে যখন তার মস্তকাবরণ খুললেন, হেকটর কান্নায় ভেঙ্গে পড়লেন – এ তো একিলিসের পোশাকে এক বালক যোদ্ধা! খবর গেলো একিলিসের কাছে! নিহত হবার খবরে সহযোদ্ধাদের ওপর এতই ক্ষিপ্ত হলেন যে, গলায় পা দিয়ে তিনি ঘনিষ্ট এক সহচরকে প্রায় মেরেই ফেলেছিলেন। কেন মরতে হলো পেটরোক্লাসকে? রাজা এগামেমননের ওপর ক্ষিপ্ত একিলিস যেন হঠাৎ শান্ত হয়ে গেলেন। তিনি ফিরে গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করলেন সেসব সহযোদ্ধাদের কাছে, যারা তার তাৎক্ষণিক ক্ষোভের শিকার হয়েছিলো। রাজা এগামেমনন ও সকল মন্ত্রী-সেনাপতিদের উপস্থিতিতে এক অবর্ণনীয় বিষাদময় সন্ধায় একিলিস পেটরোক্লাসের মুখাগ্নি করলেন। সকলেই তার শোকের অংশিদার হয়েছিলেন। হেলেনের স্বামী মেনেলাউসের নিহত হবার খবরও গ্রিকদেরকে এতো শোকাহত করে নি। একিলিস ছিলেন অস্বাভাবিক রকমের নিরব। এ নিরবতা যেন ঝড়ের পূর্বের নিরবতা। এগামেমনন বলেই বসলেন, ছোকরা মরে গিয়ে আমাদের জন্য যুদ্ধটাকে বাঁচিয়ে গেলো। তারপর একিলিসের যুদ্ধে ফেরার জন্য এখন কেবল সকাল হবার প্রয়োজন।

দি ইলিয়াড পড়েছিলাম কতটি বছর হয়ে গেলো! হেকটরের ওপর একিলিসের প্রতিশোধ নেয়ার বিষয়টি দি ইলিয়াড কাব্য-উপন্যাসের প্রধান ঘটনা। পেলিউসের সন্তান এবং দেবতা জিউসের দৌহিত্র ‘অর্ধ-দেবতা একিলিস’ দি ইলিয়াড-এর প্রধান চরিত্রও। মহাকবি হোমার এই পেটরোক্লাসের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে বিষাদের সৃষ্টি করেছেন তার কালোত্তীর্ণ মহাকাব্যে, তা পর্যাপ্তভাবে বাংলায় প্রকাশ করতে পারি নি। মূলত মহাকাব্যটি লেখাই হয়েছে বিষাদের আবহ দিয়ে। দি ইলিয়াড-এর প্রধান আকর্ষণই ছিলো ঘটনার পরিণতিতে সৃষ্ট বিষাদ, যা পাঠকের হৃদয়ে অনুরণিত হয়েছে। পাঠকের হৃদয়কে দগ্ধ করেছে, মথিত করেছে তার অনুভবকে। তাতে পাঠক আরও আগ্রহী হয়ে মনোযোগী হয়েছে পরবর্তি অধ্যায়গুলোতে। একিলিস কীভাবে ‘নবিস যোদ্ধা’ পেট্রোক্লাসের মৃত্যুর প্রতিশোধ নেন, এটি দেখা তখন পাঠকের একমাত্র উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায়। আদর্শ স্বামী, আদর্শ বড়ভাই, আদর্শ পিতা, সর্বোপরী আদর্শ যোদ্ধা হয়েও তিনি পাঠকের অনুকম্পা পেয়েছেন কেবল একিলিসের হাতে নিহত হবার পর।

দুই) পাঠকের হৃদয়কে জয় করার উদ্দেশ্যে গ্রিক দার্শনিক এরিস্টটলসাহিত্যের আবেদনকে তিনটি ভাগে ভাগ করেছিলেন: ১. নীতি বা বিশ্বাসযোগ্যতা (Ethos), ২. আবেগ বা বিষাদ (Pathos) আর ৩. যুক্তি বা গ্রহণযোগ্যতা (Logos)। তার মতে লেখায় থাকতে হবে নৈতিক আবেদন, অনুভবের আবেদন এবং যুক্তির আবেদন। গল্প কবিতা অথবা উপন্যাস, যা-ই হোক, এ তিনটি বিষয় আনুপাতিকভাবে থাকা চাই। এতিনটি মৌলিক বিষয়কে ‘ভাব প্রকাশের’ প্রধান কৌশল হিসেবে দেখা হয়: বলা হয় রেটরিকেল ট্রায়াঙ্গেল Rhetorical Triangle।

‘যুক্তি, সত্যতা আর অনুভবের’ অনুপস্থিতি ভালোমতো টের পাওয়া যায়, বর্তমান সময়ের ‘কিছু’ বাংলা সিনেমার দিকে তাকালে। যুক্তি আছে তো সত্যতা নেই, সত্যতা আছে তো সেখানে অনুভবের নেই কোন খাবার। কাহিনীগুলোর এতো পুনরাবৃত্তি হয়েছে যে, যে কোন অংশ দেখলে এর পূর্বের বা পরের ঘটনা বলে দেওয়া যায়। না আছে আবেগ, না আছে সংগতি, না আছে বাস্তবতা। হাতেগুণা কয়েকটি দৃষ্টান্ত ছাড়া, বাংলা ভাষার পুরাতন ছবিগুলোই যেন আমাদেরকে সিনেমাশিল্পটিকে ধরে রেখেছে এখনও।

অন্যদিকে আজকালের বিজ্ঞাপনগুলোর দিকে তাকালে উপরোক্ত উপাদানগুলোর সংমিশ্রণ পাওয়া যায়। বাংলাদেশের তাঁতশিল্পকে তুলে ধরে একটি মোবাইল ফোন কোম্পানির বিজ্ঞাপনটি এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য। বেশকিছু বিজ্ঞাপন দর্শকের অনুভবকে জাগিয়ে তোলে। তবে অধিকাংশ বিজ্ঞাপনেই আবেগ আছে, যুক্তিও আছে, কিন্তু সত্যতা প্রায়ই খুঁজে পাওয়া না। ফলে শ্রোতা-দর্শক তাতে আকৃষ্ট হয় না।

আবেগের কাছে যুক্তি অচল। আমার তাই মাঝেমাঝে মনে হয়, আবেগ বা Pathosই বেশি আকর্ষণ করে পাঠক বা শ্রোতার মনকে। অবশ্য কোনটির গুরুত্বই ছোট করা যায় না, তবু মনে হয়, অনুভবে সাড়া জাগাতে না পারলে একটি লেখা পুরোপুরি আকর্ষণহীন হয়ে পড়ে। সিলভেস্টার স্ট্যালনের অসম্ভব ক্ষমতাকেও মেনে নিতে আপত্তি নেই, যদি সেটা দর্শকের অনুভবকে জাগিয়ে দিতে পারে।

তিন) একটি কেইস স্টোরি তুলে ধরছি, আমার সঙ্গীটি সিনেমায় মারামারি কাটাকাটি একদম সহ্য করতে পারেন না। তাই মারামারির দৃশ্যগুলো আমার একারই সামাল দিতে হয়! বাস্তবত, আমি নিজেও ওসব পছন্দ করি না, কিন্তু হিরোকে ঘুষি দিয়ে রক্ত বের করে ফেলবে সেটা তো মেনে নিতে পারি না! অথবা ধরুন, হিরোইনের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করা হলো, তখন ইচ্ছে হয় নিজেও গিয়ে একটি ঘুষি লাগিয়ে দিই। কিন্তু আমার স্ত্রী ঠিক প্রতিশোধ গ্রহণের সময়টিতে থাকেন অনুপস্থিত। বলুন, কেমন লাগে! তখনই তো উচিত দু’জন একসাথে থাকার।

কিন্তু একবার হলো কি, এক ধুরন্দর ভিলেনের পাল্লায় পড়লাম। সিনেমার নাম বা হিরোর নাম বিবেচনায় না এনে শুধু প্রাসঙ্গিক অংশটুকু বলছি। সাপ্তাহিক ছুটির পূর্বের রাত হওয়ার সুবাদে দু’জনই টিভি সেটের সামনে বসার সুযোগ পেলাম। একজন সৎ ও চৌকশ পুলিস অফিসার ইতিমধ্যেই তার সততা ও সাহস দিয়ে আমাদের মন কেড়ে নিয়েছেন। প্রথম দিকেই একজন প্রভাবশালী ক্রিমিনালকে প্রত্যন্ত অঞ্চলের একটি থানায় হাজির হয়ে মুচলেকা দিতে বাধ্য করেছেন। সে একজন চোরাকারবারী এবং সমাজের সকল অপরাধের পৃষ্ঠপোষক আর সকল চোর-ডাকাত-দুর্বৃ্ত্তের গুরু। যেমন খারাপ তেমনই ভয়ংকর, কিন্ত্র প্রকাশ্যে সমাজসেবক। অন্য কোন পুলিস হলে হয়তো, তাকে ডাকারই সাহস পেতো না। কিন্তু থানায় আসতে বাধ্য করায় সেই সমাজপতিরূপী সন্ত্রাস-নেতাটি দারুণ অপমানিত হয়। প্রতিশোধ পরায়ন হয়ে সে তার নেতা, অর্থাৎ দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে দিয়ে সেই পুলিস অফিসারকে স্থানান্তর করিয়ে নিজ এলাকায় নিয়ে আসে। শহরে নতুন কর্মস্থলে এসে অফিসারটি প্রমাদ গুণে। সন্ত্রাস-নেতাটি ইতিমধ্যেই একটি টেলিফোন কলে ‘ওয়েলকাস টু ….’ জানিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে, এবার যাবে কোথায়! বিভিন্ন উপায়ে তারে চেলারা তাকে উত্যুক্ত করতে থাকে এবং মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করতে থাকে। ফাইল ঘেটে জানতে পারেন যে, এই থানার পূর্বের অফিসারটি এলাকার প্রধান সন্ত্রাসীর নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে নিজেরই রিভলবারে আত্মহত্যা করে। বিষয়টি তাকে আতংকিত করে তোলে। সাথে দর্শক হিসেবে আমরা ভয় পেয়ে যাই এবং হিরোর প্রতি আমাদের সহানুভূতি আরও বেড়ে যায়। সিনেমার ভিলেনের প্রতি আমাদেরও ঘৃণা বাড়তে থাকে। এসবের মধ্যেও পূর্বের অফিসারের হত্যাকারীদেরকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটাকে প্রধান কাজ মনে হলো তার। কিন্তু কাজটি যে কত কঠিন তা তার সিনিয়র কর্মকর্তা ডিএসপি সাহেব এবং মন্ত্রী মহোদয় বুঝিয়ে দিয়েছে। তারাও একই পালের গরু হওয়ায়, পুলিস অফিসারকে সাবধান করে দিয়েছে, এসব নাজাই কাজে সময় নষ্ট না করে তিনি যেন রুটিন কাজে মনোনিবেশ করেন। এতে আইন-শৃঙ্ক্ষলা নিয়ন্ত্রণে পুলিস বিভাগের ক্ষমতা যে কত সীমিত, সেটি করুণভাবে ফুটে ওঠে – এই সাথে ফুটে ওঠে সৎ ও সাহসী পুলিস অফিসারটির অসহায়ত্ব। দর্শকের মন করুণাবিষ্ট হয়।

এরই মধ্যে পুলিস বিভাগের আয়োজিত একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ‘পুলিসের অধিকার ও ক্ষমতা’ বিষয়ক জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিয়ে সেই পুলিস অফিসার সকলের দৃষ্টি করেন। তার প্রতিটি কথায় ছিলো যুক্তি, প্রমাণ এবং আবেগের প্রাবল্য। সেখানে পুলিসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাও উপস্থিত ছিলেন। একজন পুলিসের আত্মহত্যার বিষয়টি জেনে তিনিও আবেগাক্রান্ত হলেন। ওটি ছিলো মূলত একটি হত্যাকাণ্ড। ওই অনুষ্ঠানে সকলেই একমত হলেন যে, সকলে মিলে সহকর্মী হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করবেন। বাকি ঘটনা সকলেই অনুমান করতে পারেন। মজার ব্যাপারটি হলো, এর পর যতগুলো মারামারির ঘটনা ঘটেছিলো, আমার সঙ্গীটি আমাকে ত্যাগ করেন নি, বরং আমার চেয়েও বেশি আগ্রহ ও সমর্থন নিয়ে ‘প্রতিশোধ গ্রহণের’ দৃশ্যগুলো দেখে যাচ্ছিলেন।

চার) কীভাবে পেইতোস/ আবেগের প্রয়োগ ঘটানো যায়, সেটি একটি গবেষণার বিষয়। এর কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা আজও প্রতিষ্ঠিত হয় নি। আবেগের ব্যবহার অতিমাত্রায় করলে সেটি যেমন যৌক্তিকতাকে ঝুঁকির মুখে ফেলে দেয়, কম করলেও আকর্ষণ হারায়। তাই লেখককে খেয়াল রাখতে হয়, আবেগ যেন লেখার প্রধান বিষয় না হয়। একে লেখার বাহন হিসেবে ব্যবহার করা যায় – গন্তব্য হিসেবে নয়। একটি ‘সত্যকে’ প্রতিষ্ঠিত করার জন্য ‘আবেগকে’ ব্যবহার করা যায়। অথবা একটি ‘যুক্তিকে’ তুলে ধরার জন্য আবেগের আশ্রয় নেওয়া যায়।

*আবেগ তৈরি করতে হলে নিজের আবেগ এবং নিজের মূল্যবোধ দিয়ে সেটি আগে উপলব্ধি করতে হয়। একই সাথে পাঠকের অবস্থানটিকেও পরিমাপ করতে হয়।

“আজ দুঃখ-ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। … … আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কি অন্যায় করেছিলাম?…” 

বঙ্গবন্ধুর বক্তব্যের শুরু থেকেই বুঝা যায় তিনি কীভাবে বিষাদাক্রান্ত হয়েছেন। একই সাথে তিনি বুঝেছিলেন, তারা শ্রোতা কারা এবং তারা কী প্রত্যাশা নিয়ে সামনে বসে আছে। তার আবেগ তিনি অতি দ্রুতি সংক্রমিত করতে পেরেছিলেন লক্ষ দর্শকের মনে। বক্তৃতার প্রথম অংশটি আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আকর্ষণীয় মনে হয়।

*একই শব্দ একই উচ্চারণ, শুধু আবেগের প্রকাশ থাকলে, কীভাবে সেটি কোটি মানুষকে প্রভাবিত করে, এর জ্বলন্ত উদাহরণ হলো মার্টিন লুথার কিং-এর ঐতিহাসিক ‘আমি স্বপ্ন দেখি’ ভাষণটি।

“আমি স্বপ্ন দেখি যে, আমার চারটি শিশু একদিন এমন জাতির মধ্যে বাস করবে, যেখানে গায়ের রঙ দিয়ে নয়, চারিত্রিক গুণাবলী দিয়েই তাদেরকে মূল্যায়ন করা হবে । আমি স্বপ্ন দেখি। … সেদিন বেশি দূরে নয়।” শত বছর পরে হলেও তার সে স্বপ্ন পূরণ হয়েছিলো। এর প্রধান কারণ, তিনি তার আবেগ-নির্ভর যুক্তি দিয়ে শ্বেত ও কৃষ্ণ সকলকেই প্রভাবিত করতে পেরেছিলেন।

*সুকান্তের ‘মহাকাব্য’ কবিতায় যে আবেগ মিশিয়েছেন, তার আবেশ যুগের পর যুগ ফুরিয়ে গেলেও শেষ হবে না। এখানে আছে আবেগ, যৌক্তিকতা এবং সত্যের এক অনুপম মিশ্রণ। কবিতার কথাগুলো আজ প্রবাদ হয়ে আছে:

“হে-মহাজীবন, আর এ কাব্য নয়
এবার কঠিন, কঠোর গদ্যে আনো,
পদ-লালিত্য-ঝঙ্কার মুছে যাক
গদ্যের কড়া হাতুড়িকে আজ হানো!
প্রয়োজন নেই, কবিতার স্নিগ্ধতা—
কবিতা তোমায় দিলাম আজকে ছুটি,
ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়:
পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝল্সানো রুটি॥”

দুঃখবোধ, হতাশাবোধ, হারানোর বেদনা, রসবোধ, প্রাপ্তি, স্বদেশপ্রেম, ঘৃণাবোধ, শ্রদ্ধা বা অপমান, ইতিবাচক বা নেতিবাচক – প্রতিটি উপলব্ধই পাঠকের মনে ‘পেইতোস’ সৃষ্টি করতে পারে।

পাঁচ) সমালোচনা: “জল পড়ে পাতা নড়ে” অথবা “গাছে কাঠাঁল গোঁফে তেল” অথবা “রাতে মশা দিনে মাছি – এই নিয়ে কলকাতায় আছি” কথাগুলোতে উপরোক্ত তিনটি উপাদান ছাড়াও রয়েছে আরেকটি বিষয়। তা হলো, ভাষার ব্যবহার বা শব্দচয়নের মুন্সিয়ানা। বাংলা অথবা উপমহাদেশীয় সাহিত্যের অনুপম বৈশিষ্ট্যটি এখানেই নিহিত। বাংলা ভাষার গদ্য, কবিতা বা উপন্যাসে ‘ভাষা ও ভাবের ছন্দ’ সৃষ্টি করেছে একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। তথ্য, সত্য, অনুভব এবং ভাষার সম্মিলনে যে বক্তব্য প্রকাশিত হয়, তা কবিতা হোক আর প্রবন্ধ হোক, সেটি উত্তম সাহিত্যে স্থান পেতে বাধ্য!

বিষাদের একটি খণ্ডিত প্রকাশ হলো ‘বিরহ’।
মীরা দেব বর্মন তার গানে লিখেছেন “বিচ্ছেদ হবে এত মধুর জানিতাম না আগেতে … বিরহ বড় ভাল লাগে।” এটি পরে শচীদ দেব বর্মনের বিখ্যাত গানে রূপান্তরিত হয়। বাঙালি প্রেমের গল্পে তাই বিরহ থাকেই। বিরহ যেন প্রেমের ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ প্রাপ্তি। বিরহ ছাড়া প্রেমের সাহিত্য অপূর্ণ। লাইলি-মজনু, রোমিও-জুলিয়েট, ক্লিওপেটরা-এনতনি, শিরি-ফরহাদ, এসব প্রেমোপাখ্যান আমাদের কাছে আজও জীবন্ত হয়ে আছে শুধু ‘বিরহের’ কারণে। দেশ ভাষা এবং সময়কে অতিক্রম করে গল্পগুলো আজ কিংবদন্তী।

“আমাদের ভুলে গেলে চলবে না যে, আবেগ আমাদের জীবনের প্রধান পরিচালক, উপলব্ধি না করেই আমরা আবেগের আনুগত্য করি।” বলেছেন ডাচ চিত্রশিল্পী ভিনসেন্ট ভেনগগ। আমরা কখন কীভাবে আবেগতাড়িত হই, তা জানি না। কিন্তু জানি কীভাবে আবেগতাড়িত করতে হয়। সেটি এক বিরাট প্রাপ্তি। শেইকসপিয়র অথবা নজরুলের মতো এই প্রাপ্তিকে সকলেই লেখায় বা কথামালায় প্রয়োগ করতে পারেন না। এটি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দ্বারা আসে না। আসে নিবিড় পর্যবেক্ষণ এবং গভীর জীবন বোধ থেকে। তাই যারা পারেন, তারা হয় প্রাকৃতিকভাবেই পেয়েছেন, নয়তো জীবনকে অনেক গভীর থেকে দেখেছেন।

‘পেইতোস’ বিষয়টিতে কেবলই পাঠক হিসেবে ‘খণ্ডিত পর্যবেক্ষণ’ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম। ব্যক্তিগত পর্যবেক্ষণে যতটুকু বুঝেছি বা পেয়েছি, ততটুকুই লিপিবদ্ধ করে রাখলাম। ‘বিষাদ’ নিয়ে আরও ‘তথ্য এবং দৃষ্টান্তের’ অনুসন্ধান করছি। লেখাটি যদি কারও সাহিত্যচেতনাকে একটু নাড়া দিতে পারে, তবে মন্তব্যের মাধ্যমে অংশ নেবার অনুরোধ জানাই। বলা বাহুল্য, এটি একটি অসম্পূর্ণ লেখা।

———————————————————————–
পরিশিষ্ট:

১) Ethos, Pathos এবং Logos সাহিত্য সৃষ্টি বা মৌলিক লেখার প্রধান স্তম্ভ। গল্প, কবিতা, উপন্যাস বা মহাকাব্য যা-ই হোক, তা পাঠকের নীতিবোধ, আবেগ এবং ভালো-মন্দ যাচাইয়ের ক্ষমতাকে আঘাত করতে হবে। ইতোস, পেইতোস, লউগোস।
২) Ethos/ নীতি: লেখায় প্রকাশিত নীতি, অর্থাৎ পাঠকের নীতিবোধকে আহত বা জাগ্রত করার উপাদান।
৩) Pathos/ বিষাদ: বিষাদ, দুঃখ, আবেগ, হর্ষ অর্থাৎ পাঠকের অনুভবকে স্পর্শ বা আহত করতে পারার উপাদান।
৪) Logos /যুক্তি: যৌক্তিকতা বা বিচারবুদ্ধির প্রয়োগ, অর্থাৎ পাঠকের যৌক্তিকতা-বোধকে আহত বা জাগ্রত করার উপাদান।
৫) বিভিন্ন মাধ্যম থেকে লেখকের ব্যক্তিগত অনুসন্ধান থেকে লেখাটি প্রস্তুত হয়েছে।এরিস্টটল’স রেটরিক এবং হোমারের দি ইলিয়াড পড়ার স্মৃতি থেকে হাতড়ে বের করেছি ‘বিষাদ’।

=======================================================================

লেখালেখি নিয়ে অন্যান্য পোস্টগুলো:

১)  ভালো লেখার গোপন রহস্য

২)  লেখা নিয়ে লেখকের দ্বন্দ্ব

৩) বাংলা বানান কর্মশালা

https://d19tqk5t6qcjac.cloudfront.net/i/412.html

https://d19tqk5t6qcjac.cloudfront.net/i/412.html

কবিতা তোমায় দিলাম পুরাই ছুটি!

XIR155451

কবিতাকে ছুটি না দিয়ে আর উপায় দেখছি না। মাফ চাওয়া খুব জরুরি হয়ে পড়েছে আজ। ব্লগের অনেক কবিই আমাকে ভুল বুঝে থাকতে পারেন। কবিতা ছাত্রজীবনেও পড়েছি কবিতাকে ভালোও বেসেছি, কিন্তু প্রকাশ করতে পারি নি কোন কালেই। যেমন পারি নি সত্তরের ওপরে নম্বর ওঠাতে। ব্লগে এসে যা পেলাম তা হলো, কবিতার সাথে সম্পর্ক ঘনিভূত হয়েছে। সহব্লগারদের কবিতার গাঁথুনি আর ভাব প্রকাশের মুনশিয়ানা দেখে, কাউকে কাউকে ইতোমধ্যেই হিংসা করতে শুরু করেছি। ব্লগে অনেকের কবিতা আমার ভালো লাগে – আমোদিত হই, আলোড়িত হই, সঞ্জীবিত হই, কতকিছুই হই – কিন্তুক, পরকাশ করতে পারি না!:) অনেকের কবিতায় এতো মুগ্ধ হই যে, আরেকটি কবিতা লেখে ফেলার ‘খায়েশ’ জাগে – কিন্তুক, পেটে আসে আঙ্গুলে আসে না! কবিতা পাঠের অনুভূতি প্রকাশ করা আমার কাছে ‘কবিতা লেখার’ মতই কঠিন মনে হয়। ফলে যথাযথভাবে প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। তাতে, আমার ধারণা, কবি ও কবিতার সাথে একটি সুপ্ত-গুপ্ত শত্রুতা সৃষ্টি হচ্ছে দিনকে দিন। হতেই পারে। কবিতা পড়ে মন্তব্য দিতে না পারলে, তা তো কবির প্রতি অবিচারই বলতে হয়।

“ভালো – খুব ভালো – খুবই ভালো”

স্কুল জীবনের বাংলা শিক্ষক পরীক্ষার খাতায় আমাদের লেখাকে মাত্র তিনটি গ্রেইডে মূল্যায়ন করতেন: ভালো, খুব ভালো, খুবই ভালো। কিন্তু ব্লগালয়ে এর কতটুকু ওজন আছে! ‘ভালো লাগলো’, ‘হুম’, ‘সুন্দর’ ‘ভালো লিখেছেন’ ইত্যাদি ছকে-বাঁধা মন্তব্য দেবার সময় নিজেই বিব্রত হই। একটি বিশ্লেষণী বা সমালোচনা-ভিত্তিক মন্তব্য একটি সুন্দর কবিতার অতি নায্য দাবি। একে কবিতার অধিকার বলা উচিত! পাঠকের বিচারে কবিতা ভালো না হলেও কবির অধিকার আছে সহব্লগারের অঙ্গুলি থেকে দু’একটা মতামত পাবার। কিন্তু, ওই যে কইলাম….!

“আমি বলছি না ভালোবাসতেই হবে, আমি চাই
কেউ একজন আমার জন্য অপেক্ষা করুক,
শুধু ঘরের ভেতর থেকে দরোজা খুলে দেবার জন্য।
বাইরে থেকে দরোজা খুলতে খুলতে আমি এখন ক্লান্ত।” 

“তোমার চোখ এতো লাল কেন?” কবিতার সরল-কঠিন আবেদনে যত ভাবের সৃষ্টি হয়, তা তো আমি প্রকাশ করতে পারি না। অনুভব অনুভবেই আটকে থাকুক – এরকম মনোভাব নিয়েই দিনাতিপাত করছি। কবি নির্মলেন্দু গুণ অবশ্যই আমাকে অপরাধ দেবেন না।

“তার দুটো হাত-
মুষ্টিবদ্ধ যে-হাত মিছিলে পতাকার মতো উড়েছে সক্রোধে,
যে-হাতে সে পোস্টার সেঁটেছে, বিলিয়েছে লিফলেট,
লোহার হাতুড়ি দিয়ে সেই হাত ভাঙা হলো।
সেই জীবন্ত হাত, জীবন্ত মানুষের হাত।”

রুদ্র মুহাম্মদ শহিদুল্লাহ’র ‘কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্প’ পড়ে যত ঘৃণা আর ক্ষোভের উদ্রেক তা কি প্রকাশ করতে পারবো ভাষায় কখনও?
“কী ভালো আমার লাগলো আজ এই সকালবেলায়
কেমন করে বলি?
কী নির্মল নীল এই আকাশ, কী অসহ্য সুন্দর,
যেন গুণীর কণ্ঠের অবাধ উন্মুক্ত তান
দিগন্ত থেকে দিগন্তে;… …

তুমি কাছে এলে, একটু বসলে, তারপর গেলে ওদিকে,
স্টেশনে গাড়ি এসে দাড়িয়েঁছে, তা-ই দেখতে।
গাড়ি চ’লে গেল!- কী ভালো তোমাকে বাসি,
কেমন করে বলি?”

‘চিল্কায় সকাল’ কবিতায় কবি বুদ্ধদেব বসু যেন আমার মতো নাদানেরই কথা বললেন, যাদের অনুভবে বুক ফুটে তবু কলম ফুটে না! তাই কবিতা থাকুক কবিতার স্থানে। আমার মন্তব্যে যেন কবিতার অধোগতি না হয়।

বাংলা সাহিত্য যুগে যুগে সমৃদ্ধ হয়েছে রবীন্দ্র নজরুল জীবনানন্দ সুকান্তদের বিভিন্ন প্রজন্ম দ্বারা। তারা বিভিন্ন রূপে ফিরে এসে বাংলা মায়ের কবিতার ভাণ্ডারকে করেছেন সমৃদ্ধ। সেখানে পাঠক হয়ে থাকাটাও কম কিসের?

অতএব… …

অতএব, সকল সহ-ব্লগার কবিদেরকে শ্রদ্ধা জানাই বিগত এবং আগামি কবিতার জন্য! ক্ষমা চাই তাদের প্রকাশিত এবং অপ্রকাশিত কবিতায় আমার অযোগ্য মন্তব্যের জন্য। কবিতা’র যেন সম্ভ্রমহানি না হয়, সেদিকে খেয়াল করতে গিয়ে অনেক ভুল হয়তো করেছি।

কবিতা লিখতে গিয়ে অনেক দেখেছি, চেষ্টা হয়েছে কিন্তু তেষ্টা মেটে নি। চেষ্টার কোন ত্রুটিও করি নি, বরং মনে হয়েছে এর চেয়ে ভালো কবিতা আর হয় না। কিন্তু প্রকাশ হবার পর নিজ গর্ভের বিকলাঙ্গ সন্তানটির মতো মনে হয়েছে: যাকে ভালোবাসি কিন্তু অন্যদের মাঝে দেখে শুধুই করুণা হয়। তবে কেন আর চেষ্টা?  একান্তই চাপে পড়লে দু’একটি ‘অকবিতা’ লেখবো, তা নিজেরই জন্য। কবিতা পাঠেই নিমগ্ন থাকতে চাই। অতএব কবিতা তোমায় দিলাম পুরাই ছুটি। 

poetic-muse-influence

ছবি সূত্র:

১) প্রথম ছবির শিরোনাম: “The Dream of the Poet/The Kiss of the Muse” 1859-60 (oil on canvas) by Paul Cezanne (1839-1906). actuarylit.com

২) দ্বিতীয় ছবি: মারিয়া কিরিয়াকভ, ডিসেম্বর ২০১১: maraiakiriakov.blogspot.com