লেখার ‘মুড’ না থাকলে আপনি কী করেন/করবেন?

নতুন লেখকরা সবসময় প্রতিষ্ঠিত লেখকদের লেখার প্রেরণা সম্পর্কে জানতে চান। লেখার ‘মুড’ কীভাবে আসে? একজন খ্যাতিমান লেখককে এই প্রশ্ন করা হয়েছিল। তিনি যা উত্তরে জানালেন, তা সকলের জন্য প্রেরণার হতে পারে। আবার বিতর্কের বিষয়ও হতে পারে। উত্তর দেবার আগে তিনি একটি প্রশ্ন জুড়ে দিলেন:

লেখক: সত্য বলবো নাকি মিথ্যা বলবো?
প্রশ্নকারী: অবশ্যই সত্য বলবেন!
লেখক: সত্য বললে আমাদের লেখক খ্যাতির কিছু ক্ষতি হতে পারে।
প্রশ্নকারী: তবু বলুন। লেখকের কাছ থেকেই তো সত্য আশা করা যায়!
লেখক: প্রায় সবগুলো লেখাই ‘আউট-অভ্-মুড’ থাকা অবস্থায় লেখা। ইন ফ্যাক্ট, মুড খারাপ থাকলেই আমি লেখতে বসি!

লেখক নম্বর দুই বললেন, লেখকের আবার ‘মুড’ কী? আমি যদি কথা বলতে পারি, তবে লেখতেও পারি। লেখা তো আসলে আমাদের মুখের কথারই লেখ্য রূপ।

লেখক নম্বর তিন: প্রথমেই আমি যা করি, তা হলো ইন্টারনেট ব্রাউজারগুলো সব বন্ধ করা। এগুলো আমার একনম্বর মনযোগ নষ্টকারী।

লেখক নম্বর চার: আরে কী কয়? ব্রাউজার বন্ধ করলে, লেহমু কী? হুনেন, লেহার মুড না থাহলে প্রথমেই আমি ব্রাউজার খুলে দেই। ফেইসবুকে বন্ধুর স্ট্যাটাস থেকে আমি পাই মহকাব্যের প্রেরণা!

লেখক নম্বর পাঁচ: মুডের অপেক্ষায় থাকলে হবে? সম্পাদকের প্রশ্নের জবাবে যদি বলি মুড নাই, তবে মাস শেষে বিলটা আসবে কোত্থেকে? আমি লেখা চালিয়ে যাই সকল অবস্থায়। অতএব, মুড না থাকলে প্রথমেই আমি যা করি তা হলো, লেখা শুরু করে দেই।

লেখক নম্বর ছয়: আমি যেখানেই যাই সেখানেই কবিতার/গল্পের বীজ বুনি। ভালো একটি ভাবনা যখন মনে আসে, তখনই আমার নোটবুকে/স্মার্টফোনে সেটি টুকে রাখি। একেকটি ভাবনা, একেকটি কবিতা/গল্প। লেখতে বসলে সেগুলোকেই সম্প্রসারিত করে যাই। কিছু কিছু ভাবনা অবশ্য লিখিত থাকলেও কিছু সময় পর মরে যায়। মানে, লেখার সময় ওগুলোর কোন সূত্র খুঁজে পাই না আর। [ইন্নালিল্লাহ… বলে, পরবর্তি নোটে দৃষ্টি দেই :( ]

লেখক নম্বর সাত: আমি লেখার চাষ করি। সব ফুল যেমন ফল হয় না, তেমনি সব ভাবনায় লেখা হয় না। অর্থাৎ একটি বিষয়ে লেখবো এমন সিদ্ধান্ত নিয়ে আমি সবসময় বসি না। আমি সাধারণত লেখতে বসি অনেকগুলো বিষয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবনাগুলোকে কাগজবদ্ধ করতে। লেখতে থাকি… লেখতে থাকি। কমপক্ষে দু/তিন পৃষ্ঠা তো প্রতিদিনই লেখি। তা না হলে মনে হয়, আজকের দিনটিই মাটি!

লেখক নম্বর আট: লেখা নিয়ে কোন চাপাচাপিতে আমি নাই। ভাবনা না আসলে নির্ভাবনায় থাকি। টিভি দেখি, পত্রিকা পড়ি, বারান্দায় দাঁড়িয়ে আরামছে বিড়ি টানি! আকাশ দেখি, পাখি দেখি! পাড়ার চায়ের টঙের তেল চিটচিটে বেন্চিতে বসে লাল চা পান করি। বউ/বাচ্চা/বান্ধবির সাথে আলাপে মেতে ওঠি। জীবনে লেখাটাই সব নয় – জীবনবোধেরও দরকার আছে।

লেখক নম্বর নয়: লেখার মুড, নাকি ‘মুডের লেখা’? আমি সকল মুডকে লেখায় প্রয়োগ করি। মুড থাকলেই যদি লেখতে বসি, তবে তো সব লেখা এক রকম হয়ে যাবে! আমি সকল মুডেই লেখতে জানি এবং লেখিও। পাঠক পড়বেন কি না পড়বেন, সেটি অবশ্য আলাদা কথা। আমি লেখি আমার বিচিত্র মুডকে প্রকাশ করার জন্য।

লেখক নম্বর দশ: আমার দরকার তিনটি বিষয়, বিড়ি/কফি, ডেডলাইন, কম্পিউটার।

লেখক নম্বর এগারো: লেখা নিয়ে আমি কখনও ভাবি না। কারণ আমি যা ভাবি, তা লেখি না; যা লেখি তার সবই ভাবি না। লেখা শেষে নিজেই বিস্মিত হই… কী ভাবলাম, কী লেখলাম!

লেখক নম্বর বারো: মুড ছাড়াও আরেকটি জিনিস লাগে, যা প্রায়ই মুডের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। বাধ্যবাধকতা। এটি আসে যখন লেখক অর্থের জন্য লেখেন অথবা ‘অর্জিত সুনাম’ ধরে রাখার জন্য লেখেন। ‘প্রয়োজন’ সকল সৃষ্টির জন্মদাত্রী। বাধ্যবাধকতাও তেমনই একটি বিষয়।


… … …
লেখক নম্বর চারশ’ উনিশ (পোস্টের লেখক): মুড কাহাকে বলে, উহা কত প্রকার, তাহারা কী কী? আমি তো লেখি না, ব্লগিং করি!
লেখক নম্বর চারশ’ বিশ: লেখার মুড না পেলে সবসময়ই আমি যা করি তা হলো, অন্যের লেখা কপি করতে শুরু করে দেই।

আমি কোন লেখকের সাথে রাজি বা গররাজি কিছুই হতে পারছি না। বিষয়গুলো আপেক্ষিক।

লেখক যখন লেখতে বসেন তখন নিশ্চয়ই তিনি একটি ‘মেজাজে’ থাকেন। হতে পারে সেটি চিন্তাশীল অথবা হেঁয়ালী, গম্ভীর অথবা ব্যাঙ্গাত্মক, মনোযোগী অথবা উদাসীন, ক্ষুব্ধ অথবা হৃষ্ট। এই ‘মেজাজ’ নিয়ে তিনি যা লেখবেন, সেটি হয়তো সৃষ্টি করবে প্রেমবোধ অথবা বিষাদ, আনন্দ অথবা বেদনা, আশা অথবা নিরাশা… ইত্যাদি। পাঠক হয়তো মনে মনে হাসবেন, অথবা ব্যথিত হবেন। নিরবে অশ্রু ফেলবেন অথবা অট্টহাসিতেও ফেটে পড়বেন। এসব কিছু নির্ভর করে লেখক তার লেখার সময় ‘কী মেজাজে ছিলেন’ তার ওপর। গল্প হোক বা কবিতা হোক অথবা প্রবন্ধ হোক, লেখার একটি স্বতন্ত্র মেজাজ থাকবেই। আমি মনে করি, মুডই (মেজার) লেখার প্রেরণা বা লেখার সূত্র এনে দেয়। এবিষয়ে আলোচনা চলতে পারে।

পাঠকের কাছে জিজ্ঞাসা:
লেখার ‘মুড’ না আসলে আপনি কী করেন?
আপনি কি রাইটারস ব্লক বা এরকম কিছু মিথে বিশ্বাস করেন?

চলুন, এনিয়ে আলোচনায় মেতে ওঠি।

[চলবে…]

—————————
*ছবিটি libbycole.files.wordpress.com থেকে নেওয়া।

4 comments

  1. ঘুড্ডির পাইলট

    রাইটার্স ব্লক নাকি জানি না ! তবে আমার মাঝে মাঝে মাথা হতে প্লট হাড়িয়ে যায় ! এবং সেটা তখনই হাড়ায় যখন পারিবারিক কাজে বা মানসিক চাপে ব্যস্ত থাকি !
    একটা সুন্দর তথ্যমুলক লেখা দিলেন ভাই ধন্যবাদ ! 🙂

    Like

ঘুড্ডির পাইলট এর জন্য একটি উত্তর রাখুন জবাব বাতিল