বাংলা বানাণ কর্মসালা – আমার বানামে ভূল হয় না

Image

কর্মজীবনের শুরুতে শিক্ষা কর্মসূচিতে যুক্ত থাকার সময় বাংলা বানানের প্রতি সহকর্মীদের বিপজ্জনক উদাসীনতা দেখে একটি বানান প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে বাধ্য হয়েছিলাম। সে কর্মশালার শিরোনামটি ছিল “বাংলা বানাণ কর্মসালা – আমার বানামে ভূল হয় না”।

হইচই অবস্থা লেগে গিয়েছিলো: “স্যার এখানে তো অনেক ভুল…ব্যানারে এরকম ভুল!…আমরা তো আশ্চর্য…সবাই দেখে তো ভুল বানানে উৎসাহিত হবে” ইত্যাদি ইত্যাদি। ব্যানারের কারিগর তো সরাসরি আমার সাথে দেখা না করে ব্যানারই লেখবে না! আহা, বানানের প্রতি এত দরদ দেখে কেবল ওইদিনই খুশি হয়েছিলাম। এখনও যত্রতত্র অতি প্রচলিত শব্দগুলোতে বানানের ভুল দেখে কিছু না করতে পেরে অসহায় বোধ করি। নিজ ভাষার প্রতি নির্দয় ব্যবহার দেখে নিজেকেই প্রশ্ন করি: আমরা কি সত্যিই সে দেশের মানুষ, যে দেশে ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছিল?

বিব্রতচিত্তে বলতে চাই, আমাদের প্রিয় ব্লগালয়গুলোতেও কিন্তু অনেক সুন্দর লেখা সুন্দর কবিতায় বানানের অপ্রত্যাশিত ভুল দেখে ব্যথিত হতে হয়। জানি না প্লেজিয়ারিজম রোধ করার অস্ত্র হিসেবে কেউ কেউ বানানের ভুল করেন কি না, কারণ লেখার গুণগত মানের দিকে তাকালে মনে হয় না, লেখকটি এত ক্ষুদ্র ভুলটি করতে পারেন। তবে স্বীকার করছি, বাংলা ইউনিকোডে সমস্যার কারণে অনেকেই সঠিক বানানটি জানলেও প্রকাশ করতে পারেন না; বিশেষত প্রবাসী ব্লগার, যারা স্বদেশের মতো বাংলা সফটওয়্যার সুবিধা পাচ্ছেন না।

বানানে ভুল কমবেশি সকলেই বুঝতে পারেন। অনেকে নানারকমের সমালোচনা করেই থেমে যান, সংশোধনের চেষ্টা করেন না। কেউ কেউ ‘আমার-ভুল-হয়-না’ সিনড্রোমে ভোগেন। এ লেখাটি মূলত বাংলা বানান নিয়ে আমার খুঁতখুঁতে মনোভাব থেকে সৃষ্ট, যা মূলত সহকর্মীদেরকে সহায়তা করার জন্য প্রস্তুত করেছিলাম। এখন সহ-ব্লগারদের যদি কোন কাজে লাগে তবেই খুশি। লেখাটিতে ১৫টি বানানরীতি উপস্থাপিত হয়েছে: প্রমিত ১ থেকে প্রমিত ১৫ পর্যন্ত। পরে আরও ২৪টি অতিরিক্ত তালিকা যুক্ত করা হয়েছে। শেষে আছে বাংলা বানান নিয়ে সংক্ষিপ্ত পরিক্রমা। লেখকের বানান অভিজ্ঞতা এবং সচরাচর ব্যবহৃত শব্দগুলো নিয়ে বাংলা একাডেমির অভিধানের সহায়তায় তালিকাগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। বানানরীতির জন্য ড. এনামুল হক-এর ব্যকরণটি ব্যবহৃত হয়েছে। মূলত ছাত্রজীবনেও একই ব্যকরণ ছিল লেখকের সঙ্গী।

Image

প্রমিত ১) বাঙালি বালি কুমির মামি
=============================
বানানবিধি: তদ্ভব, দেশী, বিদেশী এবং মিশ্র শব্দে কেবল ই এবং উ ব্যবহৃত হবে। এমনকি স্ত্রীবাচক এবং জাতিবাচক শব্দের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।
উদাহরণ: বাড়ি গাড়ি শাড়ি হাতি তরকারি আরবি ফারসি বাঙালি ইংরেজি জাপানি ইতালি খালি বালি, রেশমি কুমির নানি মামি শাশুড়ি মুলা হিন্দি উনিশ উনচল্লিশ আসামি রুপা লটারি কোহিনুর
*ব্যতিক্রম হতে পারে যেসব শব্দে: রানী, পরী, গাভী। তাছাড়া নামবিশেষ্যের (proper noun) ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে।

প্রমিত ২) রুপালি বর্ণালি প্রণালী
=========================
বিশেষণ (adjective) অর্থে ‘-আলি’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ই হবে।
বর্ণালি রুপালি সোনালি মিতালি হেঁয়ালি চৈতালি খেয়ালি ভাটিয়ালি
কিন্তু বিশেষণ অর্থে না হলে ই হবে না: প্রণালী। তাছাড়া নামবিশেষ্যের (proper noun) ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে: সাপ্তাহিক চিত্রালী।

প্রমিত ৩) বরণীয় ভারতীয় মাননীয়
============================
বিশেষণ (adjective) অর্থে ‘-ঈয়’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে ঈ হবে: জাতীয় (কিন্তু: জাতি)।
স্থানীয়, এশীয়, লক্ষণীয়, স্মরণীয়, বরণীয়, গোপনীয়, পানীয়, যিশায়ীয়, ভারতীয়, মাননীয়, বায়বীয়, প্রয়োজনীয়, পালনীয়, তুলনীয়, পূজনীয়, কমনীয়, পরিকল্পনীয়, অকল্পনীয়, নেতৃস্থানীয়, করিন্থীয়, শোচনীয়

প্রমিত ৪) সরকারি অনিষ্টকারী দুষ্কৃতকারী সরাসরি
========================================
‘-আরি’ যুক্ত অব্যক্তিক শব্দাবলীর শেষে ই হবে: সরকারি, দরকারি, তরকারি, মস্কারি, সরাসরি
‘যিনি করেন তাকে নির্দেশ করলে’ শেষে ঈ হবে: সাহায্যকারী, যিনি সাহায্য করেন: সাহায্যকারী, ব্রহ্মচারী, পরিবেশনকারী, দর্শনকারী, তদারককারী, দুষ্কৃতকারী, অনুসারী, অনিষ্টকারী, সহকারী

প্রমিত ৫) তুমি কী পড়? বই। তুমি কি ছাত্র? না।
=====================================
সর্বনাম, বিশেষণ এবং ক্রিয়া-বিশেষণ অর্থে ‘কী’ শব্দটি ঈ-কার দিয়ে লেখতে হবে। কী বলেছ? সে কী লেখেছে? কী আর বলব? কী করে যাই? এটা কী বই? কী আনন্দ!
অব্যয় হিসেবে ‘কি’ ই-কার দিয়ে লেখা হবে: সেও কি যাবে? কি তেল কি চাল সবকিছুতেই যেন আগুন!

Image

প্রমিত ৬) পারিশ্রমিক ভৌতিক সাহসিক শারীরিক
====================================
বিশেষণ (adjective) অর্থে ‘-ইক’ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে প্রচলিত নিয়মে ই হবে।
সাংসারিক পৌনঃপুনিক মানবিক পারিবারিক শারীরিক আন্তরিক দাপ্তরিক প্রাকৃতিক জাগতিক ভৌতিক যৌগিক গণতান্ত্রিক পারিশ্রমিক সাহসিক বৈজ্ঞানিক নাগরিক ধার্মিক আহ্নিক বার্ষিক পার্বিক ঐচ্ছিক ঔপন্যাসিক সাম্প্রদায়িক গাণিতিক ভৌতিক প্রাকৃতিক
প্রত্যায়ান্তে ঈ থাকলে তা অপরিবর্তিত থাকবে: সস্ত্রীক, অলীক। বিশেষ্য পদে -ঈক হতে পারে: প্রতীক।

প্রমিত ৭) প্রাণ আয়রন প্রচণ্ড টেন্ডার
============================
> ণত্ব-বিধি অনুসারে ঋ, র এবং ষ-য়ের পর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হবে।
ঋণ ঘৃণা বিবরণ বিষ্ণু ব্যকরণ অনুকরণ নিমন্ত্রণ ভীষণ বিভীষণ কৃষাণ প্রাণ অরণ্য পরিত্রাণ ধরণ ধারণা ঘ্রাণ পরিণয় প্রণাম পরিণাম পরিণতি নির্ণয় বর্ণনা
ব্যতিক্রম: মৃন্ময়।

> তদ্ভব, দেশী, বিদেশী এবং মিশ্র শব্দে ণত্ব বিধি মানা হবে না, অর্থাৎ ণ-এর ব্যবহার করতে হবে না।
অঘ্রান কান কোরান ইরান গোনা ঝরনা পরান সোনা হর্ন আয়রন কেরানি ট্রেনিং বার্নার সাইরেন বার্নিশ শিরনি ড্রেন পরন

> বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত অবিকৃত সংস্কৃত শব্দে (তৎসম) ঠ, ট, ড এবং ঢ-য়ের পূর্বে ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়: কলকণ্ঠ কণ্টক লুণ্ঠন দণ্ড প্রকাণ্ড প্রচণ্ড ঘণ্টা কাণ্ডকীর্তি খণ্ডন মণ্ডলী ভাণ্ডার কুণ্ডলী ঠাণ্ডা

> তদ্ভব, দেশী, বিদেশী এবং মিশ্র শব্দে ঠ, ট, ড এবং ঢ-য়ের পূর্বে ন ব্যবহার করা হবে: লন্ডন টেন্ডার।

প্রমিত ৮) নিষ্ঠা স্টেশন পুলিশ খ্রিষ্ট
============================
অবিকৃত সংস্কৃত শব্দে ষত্ব বিধি মানা হবে।
ক) ট এবং ঠ বর্ণের পূর্বে ষ ব্যবহৃত হবে। বৃষ্টি দুষ্ট নিষ্ঠা পৃষ্ঠা
খ) ঋ-য়ের পরে ষ লেখা হবে। বৃষ ঋষি বৃষ্টি।
গ) খাঁটি বাংলা, বিদেশী এবং মিশ্র শব্দে ষত্ব বিধি মানা হবে না, অর্থাৎ ষ-এর ব্যবহার করতে হবে না। স্টুডিও স্টেশন জিনিস মিসর গ্রিস মুসাবিদা টেক্স মাস্টার স্টিমার স্টোর

ব্যতিক্রম:
*পুলিশ শব্দটি ইংরেজি হলেও ব্যতিক্রম হিসেবে ‘পুলিশ’ লেখা হবে।
*খ্রিষ্ট যেহেতু বাংলায় আত্তীকৃত শব্দ এবং এর উচ্চারণও হয় সংস্কৃত কৃষ্টি, তুষ্ট ইত্যাদি শব্দের মতো, তাই ষ্ট দিয়ে খ্রিষ্ট শব্দটি লেখা যাবে।

প্রমিত ৯) মসলা পোশাক শার্ট কুয়েশ্চন
================================
বানানবিধি: বিদেশী মূল শব্দে শ এবং স উচ্চারণ অনুযায়ী ব্যবহৃত হবে। তবে ষ-য়ের কোন ব্যবহার নেই।
উদাহরণ: সাল সন হিসাব শহর শার্ট শরবত শয়তান পোশাক মসলা শখ কারিশমা সিলেবাস শেয়ার আপোস

ইংরেজি এবং আরবি শব্দের বাংলা বানান:
> উচ্চারণগত সঙ্গতি থাকলে S-য়ের স্থলে স ব্যবহৃত হবে: প্রফেসর, সাবজজ, সিনিয়র, সুপার, গ্যাস, স্যানিটারি, নার্স।
> মূল শব্দে sh, sion, ssion, tion থাকলে শ ব্যবহৃত হবে: শার্ট, শেড, মিশন, রেশন, ফেডারেশন, নেশন, পাবলিকেশন, করপোরেশন, ভিশন, টেনশন। ব্যতিক্রম: কুয়েস্চন।
> আরবি-ফারসি শব্দে সে, সিন্ এবং সোয়াদ (ﺹ ,ﺱ ,ﺙ) থাকলে স ব্যবহৃত হবে: সালাম, তসলিম, ইসলাম, মুসলিম, মুসলমান, সালাত।
> আরবি-ফারসি শব্দে শিন্ (ﺶ) থাকলে যথারীতি শ ব্যবহৃত হবে: এশা, শাবান, শাওয়াল, বেহেশ্ত।

Image

প্রমিত ১০) খাওয়ানো সহজ কিন্তু শেখানো সহজ নয়। > আগে নিজে শেখো তারপর শেখাও।
========================================
বানানবিধি: বাংলায় অ-কারের উচ্চারণ বহুক্ষেত্রে ও-কার হয়। এ উচ্চারণকে লিখিত রূপ দেবার জন্য অনেকে যথেচ্ছভাবে ও-কার ব্যবহার করেন, যা বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া গ্রহণযোগ্য নয়: ছিলো, করলো, বলতো, কোরছে, হোলে, যেনো, কেনো (কী জন্য) ইত্যাদি বানান সবক্ষেত্রে ঠিক নয়।

নিম্নোক্ত বিশেষ ক্ষেত্রে ও-কারের ব্যবহার গ্রহণযোগ্য: 
> আদেশ-নির্দেশ-অনুরোধ (অনুজ্ঞা) অর্থে যখন ক্রিয়াকে ব্যবহার করা হয়: এক বালতি পানি আনো; আমাকে ধরো; বাবা! একটা গল্প বোলো; একটা গাড়ি কেনো।
> কিছু কিছু ক্রিয়াকে যখন বিশেষ্য (noun) হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। ক্রিয়া-বিশেষ্য: শিশুকে খাওয়ানো বড় কঠিন; শেখানো আমি এখনও শিখতে পারি নি; ঘুম তাড়ানো; ছেলে ভোলানো।
> যেসব শব্দে ও-কার না দিলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হতে পারে: মতো, ভালো, আলো, কালো, হলো, করানো, খাওয়াতো।

প্রমিত ১১) প্রথমত আঃ কার্যত উঃ
===========================
বানানবিধি: শব্দের শেষে বিসর্গ থাকবে না। প্রথমতঃ, কার্যতঃ ইত্যাদি গ্রহণযোগ্য নয়।
উদাহরণ: প্রধানত প্রয়াত ক্রমশ সাধারণত প্রায়শ মূলত বস্তুত প্রথমত কার্যত
ব্যতিক্রম: আঃ, উঃ ইত্যাদি আবেগপ্রকাশক শব্দের শেষে বিসর্গের ব্যবহার প্রচলিত আছে।

প্রমিত ১২) সাহিত্যপত্র সমাজভিত্তিক সংবাদপত্র
=======================================
বানানবিধি: সমাসবদ্ধ পদ একসঙ্গে লিখতে হবে।
উদাহরণ: রবিবার সংবাদপত্র প্রধানশিক্ষক সমস্যাপূর্ণ বিষয়সমূহ সমাজভিত্তিক দায়গ্রস্ত নেশাগ্রস্ত সাহিত্যপত্র হলফনামা শিশুরা ছাগলগুলি
ব্যতিক্রম: অস্পষ্টতা দূর করার জন্য কখনো কখনো হাইফেন ব্যবহার করতে নিষেধ নেই: কিছু-না-কিছু, না-বলা-কথা, ভবিষ্য-তহবিল, মা-মেয়ে, বে-সামরিক, সু-প্রতিবেশী।

প্রমিত ১৩) লালগোলাপ শুভেচ্ছা
===========================
বানানবিধি: বিশেষণ পদ সাধারণত অন্য পদের সাথে মিলবে না।
উদাহরণ: মৃদু বাতাস, লাল গোলাপ, তিন হাজার, এক জন, সুন্দর ফুল
ব্যতিক্রম: সমাসবদ্ধ হয়ে যদি অন্য কোন বিশেষ্য বা ক্রিয়াপদের গুণ বর্ণনা করে তবে স্বভাবতই তা যুক্তপদ হিসেবে একসঙ্গে লিখতে হবে: কতদূর যাবে; একজন শিক্ষক, তিনহাজার টাকা, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, লালগোলাপ শুভেচ্ছা, একসঙ্গে চলবে।

প্রমিত ১৪) আমি পড়ি নি
====================
বানানবিধি: নাই, নেই, নি, না–এই নঞর্থক অব্যয় পদগুলি শব্দের শেষে আলাদাভাবে লেখতে হবে।
উদাহরণ: বলে নাই, করে নি, যাব না, ভয় নেই

প্রমিত ১৫) জসিম উদ্দীন মধুসূদন
===========================
বানানবিধি: উদ্ধৃতি করার সময় মূল লেখায় যে বানান আছে তা-ই লেখতে হয়। লেখকের নামেও কোন পরিবর্তিত বানানরীতি কার্যকর নয়।
উদাহরণ: নমাজ (শিরোনাম), জসিম উদ্দীন, মাইকেল মধুসূদন, শামসুর রাহমান, খলিকুজ্জামান (অর্থনীতিবিদ), গীতাঞ্জলী।

সচরাচর যেসব শব্দে বানানের ভুল হয়
==============================

১) ত্রিভূজ অন্তভূজ গণিত মাণ নির্ণয় অভ্যন্তরীণ আহৃত দৌরাত্ম্য শূন্যস্থান আবিষ্কার পরিষ্কার পুরস্কার নমস্কার বর্ণনা কৌতূহল মধুসূদন কারণ তিরস্কার সরস্বতী দ্বন্দ্ব মুহূর্ত সত্ত্বত্যাগ ব্যবচ্ছেদ ন্যস্ত বাড়ি মামি উনিশ জাপানি ইংরেজি কুমির রানী বর্ণালি মিতালি সে কী লেখেছে? ঋণ ভীষণ ইরান আয়রন সাইরেন পরান ঘণ্টা প্রকা- লন্ডন দুষ্ট বৃষ্টি মাস্টার জিনিস খ্রিষ্ট মসলা শহর শরবত কারিশমা সিনিয়র সালাম শাবান ক্রমশ কার্যত প্রধানশিক্ষক প্রশ্নসমূহ জসিম উদ্দীন

২) উজ্জ্বল জ্বলজ্বলে জ্বলন্ত জ্বালানি জ্বালানো (কিন্তু:প্রজ্জলিত)।
প্রাঞ্জল অঞ্জলি শ্রদ্ধাঞ্জলি গীতাঞ্জলি

৩) পেশাজীবী কর্মজীবী ক্ষণজীবী দীর্ঘজীবী বুদ্ধিজীবী সম্মানী অভিমানী প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিযোগী মেধাবী প্রতিরোধী একাকী বন্দী দোষী বৈরী মনীষী সঙ্গী

৪) প্রবণতা বুঝাতে : উন্নয়নশীল দানশীল উৎপাদনশীল ক্ষমাশীল নির্ভরশীল দায়িত্বশীল সুশীল ধৈর্যশীল

৫) জ্বর অধ্যক্ষ প্রতীক ব্যাখ্যা সংজ্ঞা আকস্মিক মূর্ছা ক্ষীণ মুখমণ্ডল গুণাগুণ শিথিল অনুরণন হাস্যাস্পদ সালিস সত্বর উচ্ছ্বসিত স্বেচ্ছাচারী কর্মচারী সীলমোহর বিচি নীচে বাণী নবী শ্বশুর শাশুড়ি ইতোমধ্যে পরিপক্ব লজ্জাকর পুণ্য ভাস্কর, দুষ্কর সুষমা নিষিদ্ধ ষোড়শ নিষ্পাপ কলুষিত বিষণ্ন ওষ্ঠ সম্মুখ সম্মান সংজ্ঞা ব্যাখ্যা আনুষঙ্গিক সঙ্গ সঙ্গতি রূদ্ধশ্বাস দুর্নাম অন্তঃস্থল নগণ্য আতঙ্ক জটিল গগণ তিথি অতিথি অন্য অন্যান্য

৬) সাৎ প্রত্যয়ের দন্ত্য-স মূর্ধন্য-ষ হয় না: ধূলিসাৎ, ভূমিসাৎ, অকস্মাৎ।

৭) নিপুণ, কণা, কল্যাণ, গুণ, বাণিজ্য, গৌণ (স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ হয়, নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই)

৮) কারণ শব্দে দন্ত্য-ন ব্যবহারের কোনই কারণ নেই। ‘কারন’ সবসময়ই ভুল।

৯) বানানের বিকল্প নেই যেসব শব্দে: ঋণ, পুণ্য, শূন্য, শ্রবণ, মৃন্ময়, গণ, শীত, শ্রাবণ, দর্শন।

১০) ত-বর্গযুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয় না: বৃন্ত, বৃন্দ, গ্রন্থ, আক্রান্ত।

১১) -অর্তী/-আর্থী: পরবর্তী, মধ্যবর্তী, অন্তর্বতী, পরীক্ষার্থী, প্রার্থী, বিদ্যার্থী, হিতার্থী

১২) নিরীহ অতীত লক্ষ্মী যক্ষ্মা উদ্বুদ্ধ টীকা পাঠটীকা বিনীত বাণী ভবিষ্যদ্বাণী জাতি (কিন্তু: জাতীয়)

১৩) মধ্যাহ্ন অপরাহ্ণ পূর্বাহ্ণ

১৪) গ্রামীণ প্রাচীন। ঐক্য ঐক্যবদ্ধ ঐক্যজোট কিন্তু:‘ঐকমত্যের সরকার’

১৫) পরীক্ষা প্রতীক্ষা অভীক্ষা নিরীক্ষা (কিন্তু শিক্ষা ভিক্ষা

১৬) আকাঙ্ক্ষা (ক্ষ-এর পূর্বে ঙ ব্যবহার্য)

১৭) পুনরাবৃত্তি পৌনঃপুনিক পুনঃপুন পুনরাবৃত্তি পুনরুক্তি

১৮) শাস্তিমূলক অমূলক ভ্রান্তিমূলক তুলনামূলক শিক্ষামূলক আকুতিমূলক

১৯) ক্ষীর ক্ষুর ক্ষেত কিছুক্ষণ লক্ষণ

২০) ভ-এর পরের উ-কারটি সাধারণত ঊ-কার হয়: ভূমি ভূ-সম্পত্তি অনুভূতি সহানুভূতি ভূত ভূতুড়ে ভূগোল প্রভূত বহির্ভূত ভূষিত ভ্রূকুটি ভূতপূর্ব। (ব্যতিক্রম প্রভু ভুল অন্তর্ভুক্ত অদ্ভুত

২১) সকল ‘হীন’ ঈ-কার দিয়ে হয়: বিহীন হীন চরিত্রহীন দায়িত্বহীন শব্দহীন অস্তিত্বহীন অন্তহীন প্রাণহীন গুরুত্বহীন ভাষাহীন শব্দহীন কর্মহীন তারহীন বন্ধনহীন

২২) দূর সুদূর দূরবর্তী রূপ স্বরূপ অপরূপ রূপবতী দূষণ দূষিত সূত্র

২৩) স্তূপ দূত রাষ্ট্রদূত ধূলা ধূমপান কটূক্তি স্ফূর্তি চূড়া চূড়ান্ত গোধূলী নির্মূল রূপ শূন্য ময়ূর

২৪) ‘রুপালি’ লেখা যায় বলে রূপক স্বরূপ রূপ রূপকল্প ইত্যাদি লেখতে যেন ভুল না করি।

Image

বাংলা বানানের সাতকাহন
====================

১ ]] বানান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত ‘বর্ণং’ থেকে যার অর্থ ‘শব্দের মধ্যস্থিত বর্ণসমূহের ক্রমবর্ণনা’।
বাংলা বানান বলতে বুঝায় বাংলায় ব্যবহৃত শব্দে বর্ণসমূহের ক্রমানুক্রমিক বর্ণনা।

২ ]] বাংলা বানান নিয়ে বিভ্রান্তির অন্ত নেই। উনিশ শতকের পূর্ব পর্যন্ত বাংলা বানানের নিয়ম বলতে কিছু ছিল না। তখন মোটামুটি সংস্কৃত ব্যাকরণের অনুশাসন অনুযায়ী বাংলা তৎসম শব্দের বানান নির্ধারিত হতো।

৩ ]] ১৯৩৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কিছু শব্দের বানানের নিয়ম বেধে দেয়, তাতে কিছু রক্ষণশীল পণ্ডিত বিরোধিতা করলেও রবীন্দ্রনাথ ও শরৎচন্দ্রসহ অধিকাংশ পণ্ডিত ও লেখক সেসব নিয়ম সমর্থন করেন। যদিও পরবর্তিতে বিশ্বভারতী তাদের নিজস্ব বানানের নিয়ম বের করে বিভ্রান্তি চালিয়ে রাখে।

৪ ]] পাঠ্যপুস্তকে বানানের সমতাবিধানের উদ্দেশ্যে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৪ সালে গঠন করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি যারা অভিন্ন বানানের জন্য কিছু নিয়ম সুপারিশ করেন। নানা কারণে সে নিয়ম বহুল প্রচলিত হয় নি।

৫ ]] জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড ১৯৮৮ সালে কুমিল্লায় একটি কর্মশিবিরের আয়োজন করে বাংলা বানানে সমতা বিধানের লক্ষ্যে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করে। সে নীতিমালা মোতাবেক ড. আনিসুজ্জামানের নেতৃত্বে বাংলা বানানের নিয়ম ও শব্দ তালিকা চূড়ান্ত করা হয় এবং ১৯৯২ সালে ‘পাঠ্য বইয়ের বানান’ নামে একটি পুস্তিকা বের হয়।

৬ ]] বাংলা একাডেমি আবার ড. আনিসুজ্জমানকেই সভাপতি করে বানানের নিয়মগুলিকে সূত্রবদ্ধ করার জন্য কমিটি গঠন করে। এ কমিটি বিশ্বভারতী, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড প্রবর্তিত পাঠ্য বইয়ের বানানরীতিকে সমন্বিত করে একটি অভিন্ন বানানের নিয়ম নির্ধারণ করেন, যা বাংলা একাডেমির ‘প্রমিত বাংলা বানানের নিয়ম’ বলে পরিচিত। প্রথম প্রকাশ ১৯৯২ সালের ডিসেম্বর এবং পরিমার্জিত সংস্করণ ১৯৯৪ সালের জানুয়ারি।

৭ ]] উক্ত নিয়মকে অনুসরণ করে একই কমিটির অন্যতম সদস্য জামিল চৌধুরী প্রণয়ন করেন ‘বাংলা বানান-অভিধান’। ১৯৯৪ সালের জুনে বাংলা একাডেমি এটি প্রকাশ করে। বিভ্রান্তি থেকে মুক্ত থাকার জন্য বাংলাদেশের সমসাময়িক সাহিত্য এবং পত্রপত্রিকায় ওই বানানকে ‘প্রমিত’ হিসেবে গণ্য করা হয়।

Image

শেষ কথা। ভুলের শেষ নেই। এই তালিকাতেও ভুল থাকতে পারে। কিন্তু ভুল নিয়ে এগিয়ে যাওয়া বা ‘বানানে আমি কাঁচা’ বা ‘আমার বানানে ভুল হয় না’ এরকম মনোভাব আমাদের অভ্যাস খারাপ করে দিতে পারে। এজন্য নির্ভুল থাকার উপায়টি হলো: শুদ্ধ বানানে আপোসহীন থাকা, সবসময়ই অনুসন্ধানে থাকা এবং নিশ্চিত না হয়ে ব্যবহার না করা। আজকাল শুদ্ধ বানানের অনেক সহায়তা পাওয়া যায় অনলাইনে এবং অফলাইনে। আশা করছি লেখাটি একটু হলেও সঠিক বানান সম্পর্কে আমাদেরকে সচেতন করবে।

 


প্রকাশিত:  সামহোয়্যাারইন ব্লগ।  সময়ের বিবর্তন ২০১২

 

7 comments

  1. পিংব্যাকঃ Pathos: সাহিত্য রচনায় বিষাদের ব্যবহার | আওয়াজ দিয়ে যাই...
  2. পিংব্যাকঃ ::: বাংলা বানানের সাতকাহন – উপলক্ষ ‘একুশ’ »

এখানে আপনার মন্তব্য রেখে যান