Tagged: কৈফিয়ত

লেখা নিয়ে লেখা: সুধী পাঠকের কাছে আমার কৈফিয়ত

কীভাবে লেখবো এই দুশ্চিন্তায় অনেক সময় লেখাটাই হয় না। মাধ্যম আর ভাষার শুদ্ধতা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে অবশেষে প্রকাশটাই হয় না। ফলে লেখকের মস্তিষ্কে বদহজম! নিজের চিন্তা বা জীবন দর্শনকে শব্দ-বাক্য-কবিতা-বা-গল্পে প্রকাশ না করা পর্যন্ত সেটাকে মূল্যায়ন বা অবমূল্যায়ন কিছুই করা যায় না। ভাষার শুদ্ধতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা লেখকের জন্য শুরুতেই জরুরি নয়। জরুরি হলো নিজেকে প্রকাশ করার আকুতি নিবৃত্ত করা। সাধারণত সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যক্তির আত্মপ্রকাশের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়ায়।ভাষা ও মাধ্যম যদি লেখকের মননে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তবে সমাজ বা রাষ্ট্র যা করার তা লেখক নিজেই করে ফেললেন। 

ভাষা নিয়ে ভাববো, নাকি বিষয় নিয়ে ভাববো?  আমার মনে হয়, লেখকের মনে ভাষার চিন্তা করার পূর্বেই আসে ‘বিষয়ের চিন্তা’। মাধ্যম চিন্তা করার পূর্বেই আসে লেখার ধারণা বা অনুভব। ভাষার জটিলতা নিয়ে চিন্তা করার পূর্বে লেখক তার লেখার পটভূমি নিয়ে চিন্তিত হন, এটিই স্বাভাবিক। বিষয়ই যদি না থাকলো, তবে মাধ্যম বা শুদ্ধ ভাষা সেখানে কী করবে? লেখক চিন্তা করবেন তার অনুভব নিয়ে, তারপর মাধ্যম বেছে নেবেন। ভাষার চিন্তা প্রুফরিডাররা করুক!  ভেতরে যদি চিন্তা থাকে, মৌলিক ভাবনা থাকে, তবে সেটা প্রকাশ হওয়া উচিত, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। দেরি করলেই হারানোর সম্ভাবনা।প্রকাশের মাধ্যম তারপরে আসতে পারে।লেখা নিয়ে আমি অনেক কথাই বলছি বিভিন্ন ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে। হয়তো সেখানে সবকিছুই অকাট্য নয়। কেউ কেউ একে বাঁকা চোখে দেখে বলতে পারেন, আমি খুব জ্ঞান প্রকাশ করছি বা শিক্ষা দিচ্ছি।

প্রথমত, তাদেরকে সবিনয়ে বলতে চাই, প্রথমত নিজেকে বুঝার জন্যই আমি লিখছি। অস্কার ওয়াইল্ড-এর মতো নিজেকের বুঝার পর হয়তো লেখা থামিয়ে দেবো! দ্বিতীয়ত বলতে চাই, ব্লগের লেখা চূড়ান্ত নয়, এলেখা তো খসড়া হিসেবেই বিবেচিত। তৃতীয়ত, আমার বক্তব্য প্রশ্নাতীত তা কখনও দাবি করি নি, বরং পাঠককে ক্রিটিকেল হবার আহ্বান জানিয়েছি সুযোগ পেলেই। কিন্তু যে কথা অনেকবার বলেছি তা হলো, এখানে পাঠকরা খুবই সহানুভূতিশীল অন্যের অনুভূতির প্রতি চরম শ্রদ্ধাশীল; তারা সমালোচনা প্রায় করতেই চান না। এ মনোভাবকে আমি আংশিকভাবে গ্রহণ করি। তবে নানাবিধ কারণের মধ্যে এর একটি কারণ হতে পারে যে, গভীর মন্তব্য দেবার জন্য প্রয়োজন গভীরতর পর্যবেক্ষণ এবং সতর্ক পাঠ, যা অনেকের পক্ষেই সম্ভব হয়ে ওঠে না।

আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলতে চাই, নিজের মনোভাবকে প্রকাশ করার জন্যই লিখছি – মাধ্যম নিয়ে চিন্তিত হই নি এখন পর্যন্ত। প্রবন্ধ, কবিতা, ছড়া ইত্যাদি একাধিক মাধ্যমে আমাকে বিচরণ করতে দেখে অনেকে বিস্মিত হতে পারেন, কিন্তু এখানেই আমার পরিচয়, যেমনটি আমার প্রোফাইল-এ আমি বলেছি। নিজেকে চেনার আজন্ম সংগ্রামে আমি এক অস্থির মানব। এক্ষেত্রে যা সত্যি নেতিবাচক হলেও তা দেখাতে আমার আপত্তি নেই। প্রবন্ধ, কবিতা বা ছড়া ইত্যাদি বিভিন্ন মাধ্যমেই আমি প্রকাশিত হতে চাই – যখন যা সুবিধার মনে হয়। সম্ভব হলে হয়তো গল্পকেও মাধ্যম হিসেবে নিতে পারি। হয়তো কোন একদিন গানও লিখে ফেলতে পারি! শিল্পীর তুলিতে রঙ নেওয়ার মতো স্বাধীনভাবে সবগুলো মাধ্যমকে আমি ব্যবহার করে দেখতে চাই, কোনটাতে আমার স্বাচ্ছন্দ্য। ভালো কথা মনে পড়েছে, হয়তো ছবিও এঁকে ফেলতে পারি কোনদিন!  উৎকর্ষতা অনেক পরের বিষয়, হয়তো তা কখনও অর্জিত হবে না।

আপাতত ‘প্রকাশ ও প্রচেষ্টা’ আমার কাছে অগ্রাধিকার। হয়তো এ অগ্রাধিকার খুব তাড়াতাড়ি বদলাবে না। এ হলো নিজের লেখা সম্পর্কে সুহৃদ পাঠকের কাছে আমার বিনীত কৈফিয়ত।